বিশ্ব সেবিকা দিবস: ক্রিমিয়ার যুদ্ধ বা কোরোনা মহামারী, সব সময় পাশে থেকেছেন যারা

‘বিশ্ব সেবিকা দিবস’ ( International Nurses Day) । প্রতিবছর ১২ মে এই দিনটি বিশ্বের প্রতিটা প্রান্তের সেবিকাদের জন্য উৎসর্গ করা হয়। যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে যেভাবে প্রতি মুহুর্তে অসুস্থ রোগীদের শুশ্রূষা করে তাঁদের সুস্থ করে তোলেন তা সবাইকে জানাতেই প্রতিবছর ১২ মে নার্সদের উদ্দেশ্যে বিশেষ এই দিনটি উদযাপিত করা হয়। একজন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ডাক্তারদের মতো এই নার্সদের অবদান কোনও অংশে কম নয়। বিশেষ করে বর্তমান এই বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন আমজনতা। চিকিৎসকদের মতোই দিনরাত এককরে দেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কোভিড হাসপাতালে মুখ বুজে কাজ করে চলেছেন তাঁরা। অতিমারীর ছোবল থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে প্রতিনিয়ত অসহায় মুমূর্ষু রোগীদের দিনরাত এককরে সেবা করে চলেছেন তাঁরা।আধুনিক নার্সিংয়ের জননী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের (Florence Nightangle)  আজ জন্মদিন। তাই এই দিনটি পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে। প্রতি বছর ১২ মে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নার্সদের শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।চলতি বছর বিশ্ব সেবিকা দিবসের থিম হল  “ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যসেবার জন্য এক দৃষ্টি।”(A Voice to Lead – A vision for future healthcare)।শুধু তাই নয়,  বর্তমান মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নার্সরা সবার উপরে। তাঁরা রোগীদের প্রাথমিক যত্ন এবং চিকিৎসা করে চলেছেন। তাঁরাই সময়মতো রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, নার্সদের সংখ্যা বিশ্বের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীর অর্ধেকেরও বেশি।ইংল্যান্ডের ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল যেমন ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন হেড নার্স। ইংরেজ-তুর্কি নির্বিশেষে দুই দেশের আহত মুমূর্ষু সৈন্যদেরই দিনরাত ধরে প্রাণপাত করে সেবা করতেন তিনি। গভীর রাতে হাসপাতালের করিডোরে রোগীদের প্রয়োজন দেখতে হাতে মোমবাতি নিয়ে তিনি হেঁটে বেড়াতেন।সেদিনের সময়টাকে যেন আজ ভীষণ ভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছে করোনা মহামারী। এখন আর পৃথিবীর কোনও দেশে যুদ্ধ না বাঁধলেও গত একবছর ধরে অদৃশ্য ব্যাধির সঙ্গে যুদ্ধ জারি রয়েছে পৃথিবীর সব দেশেরই। মারণ ব্যাধিকে বাগে আনতে দিনরাত এককরে চলছে আলোচনা গবেষণা। অসুস্থ মানুষদের সেবায় রাতের ঘুম উরেছে ডাক্তার, নার্সদের। বাজারে ভ্যাকসিন চলে আসলেও পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। প্রয়োজনীয় মেডিকেল সামগ্রী, অক্সিজেন, মাস্ক, পিপিই কিটের অভাব। ওভারটাইম ডিউটি, চাহিদামত পারিশ্রমিকের অভাব এবং জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও পরিবারকে দূরে ঠেলে যমে-মানুষে টানাটানির লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন এই সেবিকারাই।কারণ, ইংল্যান্ডে যুদ্ধের সময় সৈন্যদের হাসপাতালে বাতি হাতে শত্রুর আক্রমণ উপেক্ষা করেই অসহায় মুমূর্ষু রোগীদের বেডের কাছে গিয়ে তাঁদের দেখাশোনা করতেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। করোনার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিও যেন তেমনই হয়ে দাঁড়িয়েছে। অদৃশ্য ব্যাধিকে রুখতে একবিংশ শতাব্দীর ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল’ হয়ে উঠেছেন আজকের যুগের অসংখ্য সেবিকারা। তাইতো তাঁদের এই অসমসাহসীকতার কাজকে কুর্নিশ জানাতে ১৯৬৫ সালের ১২ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নার্সেস প্রথমবার পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। সেই থেকে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে এই বিশেষ দিনটি।