পশ্চিমবঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন অপরির্যাপ্ত। কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছি, উত্তর পাই নি । তাই বাইরে থেকে অক্সিজেন ও ভ্যাকসিন কিনে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে। সোমবার দুপুরে মালদা এসে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । এদিন কোন রাজনৈতিক নেত্রী হিসাবে নন, রাজ্যের প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা হিসাবেই বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । এদিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ থেকে নির্বাচনী সভা সেরে হেলিকপ্টার করে পুরাতন মালদা ব্লকের নারায়নপুর এলাকার একটি বেসরকারি হোটেলে এসে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
এদিন মূলত করোণা সংক্রমণের বিষয় নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেভাবে এরাজ্যে এসে পড়েছে, তা নিয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। কোন রকম ভাবেই লকডাউন এবং নাইট কার্ফুর পথে সরকার যাবে না। তাই অযথা এনিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই । লকডাউন হলে যে সমস্যার সমাধান হবে, এমনটাই নয়। বরঞ্চ নির্বাচনী প্রচারে যে হারে বাইরে থেকে মানুষ আসছে, তারা ফিরে গেলে মনে হয় অনেক টাই ভালো হবে। বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যে দলীয় প্রচারে অনেকটাই কাটছাঁট করা হয়েছে। তবে অন্যদের ক্ষেত্রে আমি কিছু বলতে পারব না।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, করোনা সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউ উপচে পড়েছে এরাজ্যে । কিন্তু লকডাউন করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ট্রেন চলছে, বাস চলছে, বিভিন্ন যানবাহন চলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক ঢুকছে। বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ নির্বাচনে ক্যাম্পেনিং করতে এসেছে। এরাজ্যে সেফহোমগুলি নির্বাচন কমিশন নিয়ে নিয়েছে। কাজেই করোনা রোগীদের পরিষেবা দেওয়ারর ক্ষেত্রে সেগুলি এখন পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আরো বলেন , রাজ্যের প্রায় দুই হাজার গুরুতর আক্রান্ত করোনা রোগী রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনো পর্যন্ত ৫৮টি বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ৪০০টি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়ের তুলনায় এখন রাজ্যে আরও ২০ শতাংশ বেড বাড়ানো হচ্ছে। যেসব জেলায় নির্বাচন হয়ে গিয়েছে, সেখানে মেডিকেল কলেজগুলিকে পুরোদমে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে । মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। ২০০টি সেফ হোম তৈরি করা হয়েছে । যারা সেফহোম এবং হোম আইসোলেশনে আছেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সংগ্রহ করছে। সেফহোমে থাকা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চার দিনে এক হাজার বেড বাড়ানো হয়েছে। আরো সাড়ে চার হাজার বেড তৈরি করা হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে । ১০০টি হাসপাতালে করোনারি চিকিৎসা হবে। কলকাতায় ৩,২০০টি বেগ নেওয়া হয়েছে। আরও এক হাজার বেড দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নিয়ে নেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে, করোনা রোগীদের যাতে না ফেরানো হয়। গোটা রাজ্যে নির্বাচন চলছে। ফলে প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে রয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা বিপর্যয়ের সময়। তাই সভা-সমিতি নিয়েও আমাদের ভাবতে হচ্ছে।
এদিন নির্বাচনী কর্মসূচি নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, আমাদের হাতে এত টাকা নেই যে ভার্চুয়াল সভা করব। তাই ঘুরে ঘুরেই নির্বাচনী সভা করতে হচ্ছে। তবে মানুষের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য সভার সময়ে কাটছাঁট করে দেওয়া হয়েছে। আমরাতো ২৪ এপ্রিল একদিনে বাকি নির্বাচন করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম । কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা মানে নি । তবে প্রচারের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এটা মেনে নিয়েছি।