আগামী ২৩ অগস্ট, ২০২০ সাফল্যের সঙ্গে পাঁচ বছর পূর্ণ করবে বন্ধন ব্যাঙ্ক। দেশের কনিষ্ঠতম এই সার্বজনীন ব্যাঙ্কের অন্যতম লক্ষ্যই ছিল সমাজের সেই সব অংশে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যেখানে হয় তা আগে পৌঁছয়নি বা প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল।
২০১৫ সালের জুন মাসে বন্ধন গ্রুপকে সার্বজনীন ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার আগে দেশের গ্রাম ও আধা শহর এলাকায় পিরামিডের নিচের অংশের মানুষের আর্থিক চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছিল বন্ধন। প্রায় দু’দশক ধরে দেশের অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণিকে সহজে ও সময়ে ক্ষুদ্র ঋণের পরিষেবা দিয়ে তাদের ক্ষমতায়ণে সাহায্য করেছে এই প্রতিষ্ঠান। মহাজনদের শোষণ ও শৃঙ্খল থেকে তাদের মুক্ত করেছে।
সমাবেশি ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বন্ধনের আত্মায় রয়েছে। সার্বজনীন ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স পাওয়ার ফলে এই প্রতিষ্ঠান একটি মজবুত রিটেল ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করতে পেরেছে। এর ফলে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের মধ্যে যেমন একটা সঞ্চয় প্রবণতা গড়ে উঠেছে, তেমনই ব্যাঙ্কও ঋণগ্রহীতাদের কম সুদে টাকা দিতে পেরেছে।
সার্বজনীন ব্যাঙ্ক হিসাবে অনুমোদন পাওয়ার পর গোটা দেশে বন্ধন তার ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে ছড়িয়ে দিয়েছে। গোটা দেশের মোট ৩৪ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৪৫৫৯টি ব্যাঙ্কিং আউটলেট ও ৪৮৫ টি এটিএম গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ বন্ধনের সমগ্র পোর্টফোলিওর ৬৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। তবে ক্ষুদ্র ঋণ ছাড়াও নতুন প্রোডাক্টও শুরু করেছে বন্ধন—যেমন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের (এমএসএমই) জন্য ঋণ, গোল্ড লোন এবং সাধ্যবিত্তদের জন্য গৃহঋণ (২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রুহ ফিনান্স বন্ধনের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। এর মাধ্যমেই গৃহ ঋণ দেওয়া হচ্ছে)।
এই পাঁচ বছরে বন্ধন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে। এই মেয়াদে বন্ধনের কর্মী সংখ্যা ১৩ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার। ব্যাঙ্কে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি পরোক্ষেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে বন্ধন। বন্ধনের ১.১২ কোটি ক্ষুদ্র ঋণ গ্রাহক অন্তত একজন করে কর্মী নিয়োগ করেছে ধরে নিলে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতারা শুধু তাঁদের জীবিকা সুনিশ্চিত করেননি আরও ১.১২ কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ করে দিয়েছে।
বন্ধন ব্যাঙ্কের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, “গত পাঁচ বছরে বন্ধন ব্যাঙ্ক লক্ষ লক্ষ মানুষ ও ক্ষুদ্র উদ্যোগকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মূলস্রোতে আনতে সফল হয়েছে। যাঁরা আগে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন বা তাঁদের সামনে সেই সুযোগ অপ্রতুল ছিল। এর ফলে তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এসেছে এবং তাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। বন্ধনের সমস্ত গ্রাহককে তাই আমি অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁরা শুধু ঋণ নেওয়ার জন্য আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন তা নয়, জীবনের সঞ্চয় বিশ্বাস ও ভরসার সঙ্গে আমাদের কাছে রেখেছেন”।
আগামী দিনে দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগকে সাহায্য করতে বন্ধন ব্যাঙ্ক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, এই উদ্যোগগুলিই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ তৈরি করবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি মজবুতভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারলেই আত্মনির্ভর এবং শক্তিশালী ভারতবর্ষ তৈরি হবে। শুধু তা নয়, ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের ছোট উদ্যোগে রূপান্তরিত করার জন্য উৎসাহ দেবে বন্ধন। যাতে তারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে, পণ্য পরিষেবা কর ও আয়করের নিয়ম নীতি মেনে ব্যবসা করতে পারে এবং প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের শ্রেণিতে উঠে আসতে পারে ও এ সব ক্ষেত্রের জন্য সরকারি নীতির সুবিধা পায়।
মানবসম্পদের বিকাশের ব্যাপারে ব্যাঙ্ক নিষ্ঠাবান। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সেই মানবসম্পদের বিকাশ বাঞ্ছনীয়। ব্যাঙ্কের সিএসআর এজেন্সি বন্ধন-কোন্নগরের মাধ্যমে তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং আর্থিক সাক্ষরতার প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গোটা দেশের ১২ টি রাজ্যের ১২, ৯০০ গ্রামের ২৫ লক্ষের বেশি মানুষ এই সব উদ্যোগের সুবিধা পেয়েছেন।
বন্ধনের মূল স্লোগান হল—ভাল আপনার, ভাল সবার। গত পাঁচ বছরে সার্বজনীন ব্যাঙ্ক হিসাবে বন্ধন ষোল আনা এই দর্শন মেনে চলেছে এবং গ্রাহক তথা গোটা সমাজের সঙ্গে একটি দৃঢ় ও স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে নিরলস ভাবে কাজ করেছে। আজ যখন বন্ধন ব্যাঙ্ক আগামীর পথে যাত্রা করছে, এটি ব্যাংকের মূল চালিকাশক্তি গুলির উপর ভর করে আরো বৃহত্তর লক্ষ্যের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে।