এই মুহূর্তের সব চেয়ে বড়ো জল্পনা আগামী মাসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। চলছে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময়। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে বিজেপির পাশাপাশি বিরোধী জোট। সামনের মাসে নির্বাচন। পরিসংখ্যান বলছে বড় অঘটন না ঘটলে বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেস-সহ আরও কয়েকটি দলের সমর্থন বিজেপি প্রার্থী পেতে চলেছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জয় একপ্রকার সুনিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। সেখানে কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বিরোধী দলগুলি তাঁকেই রাষ্ট্রপতি পদে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচন করেছেন। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যশবন্তের হার হলেও জাতীয় রাজনীতিতে মমতার গুরুত্ব নিঃসন্দেহে আরও অনেকটা বেড়ে গেল। এর আগে মমতার উদ্যোগে দিল্লিতে বিরোধী জোটের বৈঠক হয়। তাতে ঠিক হয়েছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মতভাবে প্রার্থী দেবে বিরোধীরা। সেদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে হওয়া বৈঠকে তৃণমূল-সহ সতেরোটি দলের শীর্ষ নেতানেত্রী সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন।
সকলেই চেয়েছেন বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হোন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি। আরও কয়েক বছর সক্রিয় রাজনীতি করতে চান তিনি, এমনটাই জানিয়েছিলেন পাওয়ার। শরদ পাওয়ার রাজি না হলে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা মহাত্মা গান্ধীজির দৌহিত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধী অথবা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার নাম প্রস্তাব করেছিলেন মমতা।
এর পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়ার নামও জল্পনায় উঠে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফারুক আবদুল্লা ও গোপালকৃষ্ণ গান্ধী প্রার্থী হতে রাজি না হওয়ায় যশবন্ত সিনহার নামে সিলমোহর দেয় বিরোধী জোট। তবে যেভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে মমতা সমস্ত বিরোধী দলকে একমঞ্চে এনেছিলেন তা সবার নজর কাড়ে। বিরোধীদের সেই বৈঠকের দিকে বিশেষ নজর ছিল বিজেপিরও। মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শরদ পাওয়ার, অখিলেশ যাদব, মেহবুবা মুফতি, মল্লিকার্জুন খাড়্গে-সহ বিরোধী দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বৈঠকে বামেদের প্রতিনিধিরাও হাজির ছিলেন। তবে আম আদমি পার্টির তরফ থেকে বৈঠকে কেউ হাজির না থাকায় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কারণ আপ প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক অত্যন্ত মসৃণ। সেই বৈঠকে আপের তরফ থেকে কোনও উল্লেখ্যযোগ্য নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে শোনা গিয়েছিল। সেক্ষেত্রে সামনে এসেছিল মণীশ সিসোদিয়ার নাম। এছাড়া সেই বৈঠকে প্রত্যাশিতভাবেই অংশ নেয়নি ওয়াইএসআর কংগ্রেস, বিজেডি ও অকালি দল।
তবে বেশ কিছুদিন ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ালেও টিআরএস কোনও প্রতিনিধি পাঠায়নি সেই বৈঠকে। আর সেই বৈঠকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে দিল্লিতে বিরোধী রাজনীতির মধ্যমণি সেই মমতাই। বৈঠক শেষে সেদিন তৃণমূল নেত্রীকে বেশ হাসিখুশি মেজাজে বলতে শোনা গিয়েছিল, “এই বৈঠকের সবচেয়ে বড় বিষয় হল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলি এখানে এসেছে। গুটিকয়েক দল আসেনি। তাদের নিশ্চয়ই কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই৷ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সর্বসম্মতভাবে একজনকে প্রার্থী করা হবে। আমরা আবারও আলোচনায় বসব।”
সেই সূত্রেই শরদ পাওয়ারের ডাকা দ্বিতীয় দফার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত প্রার্থী যশবন্ত সিনহার নাম চূড়ান্ত করা হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার হয়ে গেল বর্তমানে বিরোধী জোটকে কন্ট্রোল করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটের প্রধান মুখ হিসেবে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মমতার নাম যে অনেকেই প্রস্তাব করবেন সেই বাতাবরণ অত্যন্ত স্পষ্ট। এটা বলা যেতেই পারে জ্যোতি বসু, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি রাজনীতিকে কন্ট্রোল করছেন। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় রাজনীতির সমীকরণ আগামী দিনে কোন দিকে বাঁক নেয় এখন সেটাই দেখার।