বিগত বেশ কিছুদিন ধরে পদত্যাগ পর্ব চলছিলো মন্ত্রিসভায়। এবার প্রাক্তন হলেন প্রধানমন্ত্রী। চলছিলো জল্পনা, টালমাটাল অবস্থায় ছিলো প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব পদ। এবার আশঙ্কাই সত্যি হল। দেশের স্বার্থে ও দলীয় সদস্যদের চাপের কাছে হার স্বীকার করে শেষমেশ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বরিস জনসন।
জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েই নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিতে চলেছেন বরিস। তবে বরিসের পর কে সামলাবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ? ইতিমধ্যেই এই প্রশ্নকে সামনে রেখে রীতিমতো তোলপাড় যুক্তরাজ্যের রাজনীতি।
এখনো পর্যন্ত যদিও সরকারিভাবে কিছুই ঘোষণা করা হয়নি তবে মনে করা হচ্ছে বরিসের পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদ পেতে পারেন ভারতীয় বংশভূত ঋষি সুনাক। জানা যাচ্ছে, বরিশের পর ঋষি হচ্ছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদের দৌড়ে সম্ভাব্য দ্বিতীয় প্রার্থী।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো এই ঋষিই কিন্তু প্রথম যিনি সরাসরি বরিসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন মঙ্গলবার রাতে। ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী তথা রাজকোষের চ্যান্সেলরের পদে নিযুক্ত ছিলেন ঋষি। কিন্তু মঙ্গলবার হঠাৎই তিনি নিজের পথ থেকে পদত্যাগ করেন এবং কারণ হিসেবে জানান যে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী জনসনের উপর আস্থা হারিয়েছেন।
তাঁর দেখানো পথেই হেঁটে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় প্রার্থী হিসেবে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সচিব পাকিস্তান বংশভূত সাজিদ। প্রথম দিকে অবশ্য বিষয়টিকে খুব একটি গুরুত্ব দিতে চাননি বরিস। আর তাই তিনি জানান ২০১৯ সালে যে বিপুন মানুষের ভোটে তিনি জয়লাভ করেন তাঁদের আস্থা তিনি কোনমতেই ভাঙতে দেবেন না। অর্থাৎ এক কথায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তিনি এখনই সরছেন না।
কিন্তু রাতের মধ্যে পরিস্থিতি আরও গম্ভীর হয়। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার রীতিমতো হিড়িক পড়ে যায়। একের পর এক কমপক্ষে ৪০ জন মন্ত্রী নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং সকলেই কারণ হিসেবে জনসনের ওপর আস্থা হারানোর কথাই জানান। এরপরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে বরিসের প্রধানমন্ত্রীর গদি থেকে সরে যাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সেই আশঙ্কার কথা সত্যি করেই বৃহস্পতিবার নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিতে চলেছেন বরিস।
তবে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন উঠেছে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হতে চলেছেন। সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর পদ দখলের এই লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মর্ডাউট। দলের বহু সদস্যই তাঁর উপর যথেষ্ট নির্ভরশীল এবং অধিকাংশেরই মত তাঁর প্রকৃত নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। পাশাপাশি পেনি জনসনেরও খুব কাছের মানুষ। তবে পেনির পরেই যার নাম উঠে আসছে প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য তিনি হলেন ভারতীয় বংশভূত ঋষি সুনাক।
এছাড়াও ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াই এগিয়ে রয়েছেন ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন ওয়ালেস, বিদেশ সচিব লিজ ট্রুজ এবং স্বাস্থ্য সচিব সাজিদ জাভিড। তবে শেষ হাসি কে হাসবেন তা এখনও কারোরই জানা নেই। পাশাপাশি জানা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়লেও চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সামলাতে পারেন জনসন নিজেই।
তবে এখনো পর্যন্ত কোন কিছুই সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। অন্যদিকে বরিশ জনসনের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতির কাজ শেষ হয়েছে বলে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দেবেন তিনি।