উজান
( বিকে নার্জিনারি)
উলু খেড়ের খড় দিয়ে তৈরি একটি গৃহ। যা আজ লুপ্তপ্রায় , তবে বেশ কিছু জাগায় এর দেখা মেলে। দক্ষিণ বঙ্গে ধানের খড় দিয়ে তৈরি হয় গৃহ বা দোকান যাই বলো না কেন কিন্তু আমাদের উওর বঙ্গে ধানের খড় ব্যবহার না করে উলু খেড় বা কাশফুলের খেড় দিয়ে তৈরি করা হয়।
আমাদের এখানে “খড় ” কে স্থানীয় ভাষায় ‘ খেড় ‘বলি, “উলু খড়” কে বলি ‘ ইলুয়া খেড়’ আর “কাশবন” কে বলি ‘কাশিয়া ‘। এটা আমাদের এখানকার স্থানীয় ভাষা যা জনমানসে প্রচলিত। অন্যদিকে বোড়ো, রাভা, নেপালি, আদিবাসী সমাজে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
ইলুয়া খেড় দিয়ে ঘড় বা গৃহ তৈরি করলে অনেক শ্রম আর পরিশ্রম আবশ্যক। এখানে ইলুয়া বা কাশিয়া খেড় কে প্রথম অবস্থায় যথেষ্ট পরিমাণে শক্ত বা পুরাট করে পাকতে দেওয়া হয়, তার পরে কাছি বা হাশুয়া দিয়ে কেটে রাখা হয়। এভাবেই সপ্তাহখানেক শুকিয়ে সেটা গাড়িতে হোক বা কাঁধে বা মাথায় উবিয়ে(উঠে) নিয়ে আসা হয়। তারপর মাফ অনুযায়ী কেটে সেটাকে ঘড়ের কাজে লাগানো হয়। এক্ষেত্রে বাটি দুড়ি (দড়ি) আর বড়ো বাঁশা বা মাকলা বাঁশের প্রয়োজন হয়ে থাকে।” ছান” পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। এই ছান অনেক রকমের হয়ে থাকে যেমন-ভাটি ছান, উজান ছান, লম্বা ছান, টানা ছান ইত্যাদি। যে যার মতো সৌন্দর্য ব্যবহার করতে বদ্ধপরিকর, তবে টানা ছানের সৌন্দর্য সর্বাধিক। এ ছানে অতিরিক্ত শ্রম ও সময় লাগার কারণে ভাটি ছান ও উজান ছান কে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
তবে বর্তমানে এটি লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, আজকাল সবাই পাকা বাড়ির দিকে নজর দিয়েছে। একসময়, উলু খেড় আর কাঠের তৈরি বাড়ি বেশ জনপ্রিয় এখন টিন ও পাকা বাড়ির দিকে বেশি নজর।
তবে খেড়ের ঘড়ে থাকার মজাটাই আলাদা থাকে, বিশেষত ঝড় আর বৃষ্টির সময় কোনো রকম শব্দ পাওয়া যায় না, গরমের দিনে বেশ আরামদায়ক আর শীতের দিনে বেশ গরম দায়ক হয়ে থাকে। আজকাল ন্যাশনাল হাইওয়ে এর পাশে বেশ কিছু ধাবাতে এই ধরনের ঘড় দেখতে পাওয়া যায়। তবে কথা একটাই আগে প্রয়োজনে এই ঘড় ব্যবহৃত হতো বর্তমানে শৌখীনতার কারনে ব্যবহৃত হয়।