কোন অভিযোগের ভিত্তিতে সরানো হলো দুই বড় পদে থাকা মন্ত্রীকে

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর থেকেই, জল্পনা ছিলই বড় রদবদল হবে মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ যেতে পারেন তিনি। সেই জল্পনাকে সত্যি করেই মুখ্যমন্ত্রী ঢেলে সাজালেন নতুন মন্ত্রিসভা। ব্যাপক রদবদল করা হল সেখানে। কোনও মন্ত্রীর দায়িত্ব বাড়ল, কারও আবার কমল।

সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভা থেকে চারজনকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা হলেন সৌমেন মহাপাত্র, রত্না দে নাগ, হুমায়ুন কবীর ও পরেশ অধিকারী। শেষোক্ত দু’জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।

অন্যদিকে অসুস্থতার কারণে রত্নাকে সরিয়েছেন তিনি। আর সৌমেনকে বিশেষ সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার কারণে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে সদ্য অপসারিত রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারীর। তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী যেভাবে চাকরি পেয়েছেন তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে।

সেই ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল সরকার। আর সেই কারণেই মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয়েছে পরেশকে। কিন্তু কি কারণে মন্ত্রিত্ব হারালেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা হুমায়ুন কবীর? আসলে তাঁর বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

বেশ কয়েক মাস আগে হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে সবিতা লায়েক নামে এক আদিবাসী তরুণী গুরুতর অভিযোগ আনেন। অভিযোগ ওঠে প্রাক্তন পুলিশ কর্তা তথা তৎকালীন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর তাঁর দফতরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই তরুণীকে বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করিয়েছিলেন।

এমনকী তাঁকে নাকি জাত তুলে অপমান পর্যন্ত করেছিলেন হুমায়ুন। হুমায়ুনের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা দাস কবীরের বিরুদ্ধেও সরব হন সবিতা। এরপর হুমায়ুনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

আর অভিযোগ প্রত্যাহার করতে ওই আদিবাসী তরুণীর উপর চাপ সৃষ্টি ও তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রী-পত্নীর বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা, এমনকী পুলিশও জড়িত বলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে অভিযোগে জানান ওই আদিবাসী তরুণী।

তরুণীর দাবি তিনি থানায় যে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সেটা প্রত্যাহার করতেই হুমায়ুনের স্ত্রী ও স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা তাঁকে ভয় দেখেন। ছাপানো বয়ানে তাঁকে জোর করে সই করানোর চেষ্টা করছেন। তরুণীর বয়ান অনুযায়ী সেই কাগজে লেখা ছিল হুমায়ুনের বিরুদ্ধে তিনি যা অভিযোগ এনেছিলেন সে সব মিথ্যা।

আর সেই কাগজেই তাঁকে সই করানোর জন্য সকলে মিলে মারাত্মক চাপ দিচ্ছিলেন তাঁর উপর। যদিও সবিতা শেষ পর্যন্ত সেই কাগজে সই করেননি। এখানেই শেষ নয়, সবিতার আরও দাবি চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা বলে একদিন সকালে তাঁর বাড়িতে পুলিশ আসে। আর পুলিশের গাড়িতেই তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখান থেকে এক তৃণমূল নেতার গাড়িতে তাঁকে ও তাঁর অভিভাবকদের নিয়ে যাওয়া হয় কোলাঘাটের একটি হোটেলে। সাদা পোশাকের এক পুলিশকর্মীও গিয়েছিলেন সেখানে। সবিতার অভিযোগ সেখানে হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী-সহ তৃণমূল নেতা এমনকী পুলিশ পর্যন্ত তাঁকে কাগজে সই করার উপর জোর জবরদস্তি করেন। তাঁকে লকআপে পুরে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।

তবুও তিনি কাগজটিতে সই করেননি। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন হুমায়ুন এবং তাঁর স্ত্রী। কিন্তু সূত্রের খবর, সেই অভিযোগের সারবত্তা আছে এটা মনে করে মুখ্যমন্ত্রী এবার হুমায়ুনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিলেন। সেই সঙ্গে দলকেও দিলেন কড়া বার্তা।

মন্ত্রিসভার রদবদল এটাই প্রমাণ করে যে মমতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে। সেভাবেই করা হয়েছে রদবদল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় কাণ্ডের পর মমতা এখন অনেক বেশি সতর্ক। সদ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়েছেন কেউ যেন এমন আচরণ না করেন যাতে দল তথা সরকারকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। যদিও হুমায়ুন এবং পরেশকে কেন তিনি বাদ দিয়েছেন তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে উত্তরটা যে সবার কাছে স্পষ্ট, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।