হ্যাশট্যাগ “আব কি বার দিদি সরকার”, এখন এমনটাই ট্রেন্ডিং দেখা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ২৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কিনা তা নিয়ে অবশ্য তাবড় জ্যোতিষীরা এখনও ভবিষ্যৎবাণী কিছু করেননি। বাঙালি প্রধানমন্ত্রী! আমাদের সব জল্পনা যদি আগাম বলে দেওয়া যেত। চুলচেরা হস্তরেখা বিচার, জন্মকুন্ডলী, ছক বিচার নিশ্চই শুরু করে দিয়েছেন জ্যোতিষীরা। সেদিক নিয়ে আলোচনা না হয় পরে করা যাবে। কিন্তু আপাতত দার্জিলিং জেলায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সুদিন যে ফিরছে না তা জ্যোতিষশাস্ত্র বিচার ছাড়াই হলফ করে বলে দেওয়া যায়। আপনি যদি প্রশ্ন করেন রাজ্যে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গঠন হয়েছে। গোটা দেশে এখন মমতা মমতা জননেত্রী হাওয়া বইছে। জাতীয় দল কংগ্রেস লাট খেয়ে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। শুধু কী তাই বিমান বসুরা এখন কান্নাকাটি শুরু করেছেন ‘আমাদের একটু জায়গা দাও দিদিভাই’। সেখানে এরপরেও দার্জিলিং জেলায় উড়বে না তৃণমূলী জয়ের পতাকা?
কী করে এখন থেকেই এমন ভবিষ্যৎবাণী করার সাহস পাচ্ছেন আমজনতা? দিদি রাজি হলে আর রাজ্যের পাঁচটা পুরসভার সঙ্গে শিলিগুড়ি পুরনিগমের নির্বাচন আসন্ন। আবার তারপরেই রয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন। কিন্তু লক্ষণীয় গোটা রাজ্যে শাসকদলের বিজয় রথ শিলিগুড়িতে এসে থেমে যায়! মহকুমা পরিষদ দিয়ে শুরু করা যাক। বামেদের হাত থেকে কিছুতেই তৃণমূল মহকুমা পরিষদ দখলে নিতে পারেনি। শিলিগুড়ি পুরনিগমের নির্বাচনেও মুখ থুবড়ে পড়েছে দিদির দল। এরপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন একের পর এক হার হয়েছে শাসকদলের। গোটা রাজ্য যখন ঘাসফুলের দখলে গিয়েছে সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থেকে গিয়েছে দার্জিলিং জেলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়িবাসীর কাছে একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য বহু বার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু জয়ের চাকা ঘোরেনি আজও। দিদি বার বার নির্বাচন পরিচালনার ভার দিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবকে। কিন্তু বার বারই গৌতম দেব ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রথমে জেলা সভারপতির দায়িত্বে ছিলেন গৌতমবাবু। তাঁকে সরিয়ে রঞ্জন সরকারকে বসানো হয় জেলা সভাপতির আসনে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। তৃণমূলের হারের রেকর্ড অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক হারেও কোনও শিক্ষা হয়নি জেলা তৃণমূলের। দলে চরম গোষ্ঠীবাজি, কোন্দল, পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি দীর্ঘ হলেও গৌতমবাবুর নাকি তাতে কোনও যায় আসেনি। দলেই আলোচনা, তিনি নাকি নিজের খুশিমতো দল চালাচ্ছেন। আদি তৃণমূল নেতারা অনেক আগেই সরে গিয়েছেন। কিছু পেটোয়া লোকজনকে নিয়ে নাকি গৌতমবাবুর ওঠাবসা। জমি মাফিয়া, তোলাবাজ এমন অভিযুক্ত কয়েকজনকে সবসময় তাঁর আশেপাশে দেখা যায় বলে আওয়াজ উঠছে। কিন্তু এসব তিনি নাকি কেয়ার করেন না। সমস্ত কিছুতেই তিনিই নাকি শেষ কথা। কেউ আবার আগ বাড়িয়ে বলছেন, নিজেকে তিনি নাকি উত্তরবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন। সবকিছুকে নিজে কুক্ষিগত করে রাখা নাকি তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দলের কারও কোনওরকম মতামত নেওয়ার প্রয়োজনই নাকি তিনি বোধ মনে করেন না। দলের অন্দরে অনেকেই তাঁর প্রচণ্ড দুব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেন। কিন্তু গৌতমবাবু এসবের কোনও গা করেন না। তৃণমূল কংগ্রেসের ২৩ বছর বয়স হলেও দার্জিলিং জেলায় দল আজও সাবালক হয়নি বলে আক্ষেপ করে আসছে তৃণমূল। পরবর্তী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পিকের টিম নাকি এসেছিল জেলায় নেতা নির্বাচন করতে। পরিচিত, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে নাকি খুঁজে পায়নি পিকের টিম। দলীয় সূত্র বলছে, আবার ঘুরেফিরে নাকি দলের জেলা সভাপতি করা হবে গৌতমবাবুকেই। আগামী নির্বাচনগুলিতে আবার গৌতমবাবুর ওপরই ভরসা রাখতে চাইছেন দিদি। দলের নেতারা সেই খবর নাকি পেয়ে গিয়েছেন।
চরম হতাশ আদি নেতারা তাই বলছেন, এতসবের পরেও আবার গৌতম দেবকেই দায়িত্ব? দলের যা অবস্থা তাতে খোলনলচে না বদলালে এখানে তো কিছুই হবে না। জনগণ সাথে না থাকলে, জনগণের মন বা পেলে জয় তো অনেক দূরে! জেলায় দলটাই শেষ না হয়ে যায়।