মোট সুন্দরবনের ৬১ শতাংশ বাংলাদেশে এবং ৩৯ শতাংশ ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। সুন্দরবনের লোকালয়ে সম্প্রতি হঠাৎ বাঘের উৎপাত বেড়েছে। দক্ষিণরায়ের বাহনের আনাগোনা বারার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের বন্যপ্রাণ নীতিকেই দায়ী করছে ভারত। বাংলাদেশের সুন্দরবনের জঙ্গলের বাঘেরা প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার না পেয়ে বাংলার সুন্দরবনে আসছে। তাই সুন্দরবন লাগোয়া লোকালয়ে বাঘের উৎপাত বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বাঘেদের পর্যাপ্ত খাবার দিতে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে গভীর জঙ্গলে হরিণ, শূকর, বাঁদরের মতো প্রাণী ছাড়া হয়, যাতে বাঘেরা জঙ্গলের ভিতরেই পরিমাণমতো খাবার পেয়ে যায়।
বন দফতরের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজেদের তহবিল থেকে সেই খরচ বহন করলেও বাংলাদেশ সরকার তা করছে না। গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে এবং পরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এ জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাজ্য বন দফতরের একাংশের দাবি, পরিস্থিতি যা তাতে সুন্দরবন নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ‘উদাসীনতা’ ধরা পড়েছে। ফলে বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাঘেরা খাবার না পেয়ে ভারতের (তথা পশ্চিমবঙ্গের) অংশে থাকা সুন্দরবনের দিকে খাবারের খোঁজে চলে আসছে। এর ফলে সুন্দরবনের জঙ্গলে খাবার বাড়ন্ত হয়ে পড়ছে। ফলে বাঘেরা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এই কারণেই সাম্প্রতিক কালে একাধিক বাঘের লোকালয়ে ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
বন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমাদের হাতে থাকা বাঘের সংখ্যা অনুযায়ীই সুন্দরবনের জঙ্গলে হরিণ বা শূকরের মতো প্রাণীদের ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু এই সুন্দরবনে এসে খাবারে ভাগ বসাচ্ছে বাংলাদেশের সুন্দরবনে থাকা বাঘেরা। খাবারে টান পড়ায় বাঘেরা জনবসতি এলাকায় খাবারের খোঁজে চলে আসছে। তাতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’’ তবে একই সঙ্গে এ পারের বনাধিকারিকেরা এ-ও মানছেন যে, বাংলাদেশের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে জল-জঙ্গলের দিকে নজর দেওয়া তদারকি সরকারের প্রশাসনের পক্ষে সম্ভভ নয়। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সুন্দরবন নিয়ে উদাসীন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সমস্ত দিকে তেমন ভাবে নজর দেওয়া কি সম্ভব? বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তদারকি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় সুন্দরবনের বাঘের জন্য খাবার সরবরাহ থাকা কঠিন।’’