এবার রাজ্যের বিরোধী দল নেতাকে বিপাকে ফেলতে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ

আবার একবার বিতর্কিতভাবে শিরোনামে উঠলো রাজ্যের বিরোধী দলনেতার নাম। বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছারে না নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর। সৌজন্যে তৃণমূল কংগ্রেস! শুভেন্দুকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে, এই দাবিতে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন শুরু করেছে তৃণমূল।

ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দু অধিকারী নতুন করে খবরের অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছেন। আর বিরোধী দলনেতাকে বিপাকে ফেলতে তৃণমূল হাতিয়ার করছে সারদা-নারদা কাণ্ডকে।

সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, এই অভিযোগ করেছেন সুদীপ্ত নিজেই। সেই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে পথে নেমেছে তৃণমূল। তৃণমূলের বক্তব্য একটাই, সকলকে এজেন্সি ডাকলেও নারদা-সারদা মামলায় শুভেন্দুকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে কেন? সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স, হলদিয়া এবং কাঁথিতে সভা এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে তৃণমূল।

সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সারদা কেলেঙ্কারিতে শুভেন্দুও জড়িয়ে। তাঁকে কেন গ্রেফতার করছে না সিবিআই? সুদীপ্ত সেনের অভিযোগ, শুভেন্দু লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। তাঁর চিঠিতেই সেকথা রয়েছে। এখন কোথায় গেল সিবিআই?

সিবিআই অফিসাররা জানেন, সারদার পিছনে কারা রয়েছেন। তাই তো তড়িঘড়ি দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের পায়ে পড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। সারদাকর্তাও নিজে বলেছেন, শুভেন্দু ব্ল্যাকমেল করে টাকা নিত। কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না?’’ আর শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন বালিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়ও।

তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীকে ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। সারদা মামলায় তাঁর নাম উঠে এসেছে। বিজেপি সিবিআইকে পরিচালিত করছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সিবিআইকে ব্যবহার করছে। বিজেপির অভিসন্ধি সম্পর্কে সব জেনেছি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন। সিবিআই যখন সারদা মামলায় সবাইকে ডেকেছে, তা হলে কেন শুভেন্দু অধিকারীকে ডাকবে না?’’

শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেও এই ইস্যুতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তৃণমূল। হলদিয়ার বিক্ষোভ সভায় কেশপুরের তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, ‘‘নারদার টাকা কাগজে মুড়ে পকেটস্থ করতে দেখা গিয়েছে যাঁকে, তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হবে না? হলদিয়াবাসী তো সবই দেখেছিলেন টিভিতে!’’

অর্থাৎ এটা স্পষ্ট একটা সময় সারদা-নারদা ইস্যু তৃণমূলকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেললেও সেই ইস্যুতেই এখন পাল্টা শুভেন্দুকে নিশানা করে বিজেপিকে বিপাকে ফেলতে চাইছে তৃণমূল। ওই দুর্নীতি কাণ্ড শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এখন তৃণমূলের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সারদা ইস্যু নতুন করে রাজ্যে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে কলকাতা হাইকোর্ট সারদার আমানতকারীদের ফের টাকা ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে।

সারদার আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে কেন্দ্র ও রাজ্যকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি শুভেন্দু সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ। অবিলম্বে সেবি, সিবিআই, ইডি এবং রাজ্যকে তাঁদের হাতে উদ্ধার হওয়া আমানতের টাকা অবিলম্বে প্রাক্তন বিচারপতি এস পি তালুকদারের নেতৃত্বাধীন এক সদস্যের কমিটির কাছে জমা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কমিটির মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

জানা গিয়েছে সারদার উদ্ধার হওয়া প্রায় ১৪০ কোটি টাকা সরকারের হাতে রয়েছে। এছাড়া সেবি, সিবিআই, ইডি-র হাতে থাকা প্রায় ১২০০-১৩০০ কোটি টাকা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা ফেরানো যাবে আমানতকারীদের হাতে। উল্লেখ্য দীর্ঘদিন প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে ছিল বিষয়টি। সব মিলিয়ে সারদা-কাণ্ড এবং শুভেন্দু অধিকারী নতুন করে খবরে উঠে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কোনও পদক্ষেপ করে কিনা এখন সেটাই দেখার।