বাংলায় সেই ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে না পারলে অন্য রাজ্য গুলির ওপর দীর্ঘদিন ধরেই নজর গেরুয়া শিবিরের। দক্ষিণ ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই কর্নাটকে বিজেপির বেশ ভাল সংগঠনিক শক্তি রয়েছে। এই রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। কর্নাটকের পাশাপাশি তেলেঙ্গানায় দ্রুত উঠে আসছে বিজেপি। কিন্ত এই দুটি ছাড়া দক্ষিণ ভারতের বাকি রাজ্যগুলিতে বিজেপির তেমন সম্ভাবনা নেই। কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশে বিজেপি একেবারেই বড় শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয় না।
আর ঠিক সেই জায়গা থেকে বিজেপি ওই রাজ্যগুলির মানুষকে বিশেষ বার্তা দিতে চার কৃতীকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেই সূত্রে কিংবদন্তি অ্যাথলিট ‘সোনার মেয়ে’ পি টি ঊষা এবার রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। পি টি ঊষার পাশাপাশি রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন প্রখ্যাত সুরকার ইলিয়া রাজা। তাঁদের নাম ঘোষণা করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া ধর্মস্থলা মন্দিরের ধর্মাধিকারী বীরেন্দ্র হেগড়ে ও দক্ষিণ ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার কে ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পি টি ঊষা সম্পর্কে জানান, “ক্রীড়া জগতে তাঁর কৃতিত্বের জন্য ব্যাপক পরিচিত পিটি ঊষা। বছরের পর বছর ধরে উদীয়মান ক্রীড়াবিদদের গাইড করেছেন তিনি। এ কাজেও তাঁর অপরিসীম অবদান রয়েছে। তিনি রাজ্যসভায় মনোনীত হওয়ার জন্য অভিনন্দন”। আর ইলিয়ারাজা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জানান, “তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে সুন্দরভাবে আবেগ উঠে এসেছে। তিনি রাজ্যসভায় মনোনীত হওয়ায় আমি খুশি”।
সেই সঙ্গে বীরেন্দ্র হেগড়ে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জানান,” ধর্মস্থলা মন্দিরে প্রার্থনা করা এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বীরেন্দ্র হেগড়ের অসাধারণ কাজ দেখার সুযোগ পেয়েছি। তিনি সংসদীয় কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করবেন বলে মনে করি”। আর কে ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ সৃজনশীল জগতের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাজ ভারতের গৌরবময় সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করেছে বিশ্বমঞ্চে, এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য দক্ষিণ ভারতের চারটি রাজ্য থেকে চারজনকে রাজ্য সভায় মনোনীত করা হয়েছে। কেরলের পি টি ঊষ, তামিলনাড়ুর ইলিয়ারাজা, কর্নাটকের বীরেন্দ্র হেগড়ে এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কে ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদকে রাজ্যসভায় মনোনীত করা হল। দক্ষিণ ভারতকে বিশেষ বার্তা দিতেই তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
দু’বছর বাদে লোকসভা নির্বাচন। তাই এখন থেকে বিজেপি সেই লক্ষ্যে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আগের বারের মতো ভাল ফল হবে না বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিজেপির আসন কমতে পারে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান প্রভৃতি রাজ্যে।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি চাইছে এই রাজ্যগুলি থেকে কমে যাওয়া আসনের কিছুটা হলেও যদি দক্ষিণ ভারতের বাকি রাজ্যগুলি থেকে পাওয়া যায় তাহলে শরিকদের সাহায্য ছাড়াই একার ক্ষমতায় ফের কেন্দ্রের মসনদে বসতে অসুবিধা হবে না। তাই এখন থেকেই সেদিকে নজর দিয়ে বিজেপি দক্ষিণ ভারতের চারটি রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় গুণীজনদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাদের এই পদক্ষেপ ওই রাজ্যগুলির মানুষকে বিশেষ বার্তা দেবে বলেই আশা বিজেপির।