শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় জর্জরিত রাজ্যে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআই স্বয়ংক্রিয় ভাবেই কাজ করে। তাদের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নাকি কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এই দাবি নিয়মিত করে থাকে বিজেপি।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অঙ্গুলিহেলনেই সিবিআই-ইডি নিয়মিত হেনস্থা করছে বিরোধীদের। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বৈঠক নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ইডি গ্রেফতার করার পর শুভেন্দু-অমিতের এই বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সোমবার রাতেই দিল্লি পৌঁছেছেন শুভেন্দু। দিল্লি আসার আগে শুভেন্দু জানিয়েছেন তিনি কেন দিল্লি যাচ্ছেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য ৪ আগস্ট দিল্লি সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কয়েক দিন আগেই দিল্লি যাচ্ছেন তিনি। আর তার আগেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন শুভেন্দু। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের নিরিখে শুভেন্দুর হঠাৎ দিল্লি যাত্রা নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর বঙ্গ বিজেপি ক্রমাগত ভাঙতে শুরু করেছে। একের পর এক বিধায়ক, নেতা, সাংসদ ও বহু কর্মী দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে বহু বিজেপি নেতানেত্রীকে দলের আন্দোলনের মঞ্চে দেখা যায় না। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরোধের কথা সকলেই জানেন।
এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপিকে আন্দোলনের ময়দানে মূলত রেখে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামিল হয়ে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব শুভেন্দুকে বহুদিন ধরেই বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করেছেন শুভেন্দু।
কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বর্তমানে তৃণমূল বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। তবে কি রাজ্যের উপর চাপ আরও বাড়ানোর জন্য শুভেন্দু বৈঠকে বসলেন শাহের সঙ্গে? তবে কি বিরোধীদের অভিযোগ অনুযায়ী বিজেপির ইশারায় পশ্চিমবঙ্গের উপর চাপ আরও বাড়াবে ইডি বা সিবিআই?
বেশ কিছুদিন ধরেই শুভেন্দু দাবি করছেন আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগেই তৃণমূল সরকার পড়ে যাবে। যদিও কিসের ভিত্তিতে এই দাবি তিনি করেছেন তার কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সেই বিষয় নিয়েও কি আলোচনা চালানোর চেষ্টা করছেন শুভেন্দু?
সবচাইতে বড় কথা দিল্লি সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক তার আগেই শুভেন্দু-শাহের বৈঠক নিয়ে যথেষ্ট চর্চা শুরু হয়েছে রাজধানীতে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আন্দোলন কার্যত পুরোপুরি শুভেন্দু কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে।
যা শুভেন্দুর কাছে নয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় যেভাবে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইস্যু হাতে পেয়েছেন শুভেন্দু, সেটিকে হাতছাড়া করতে চান না তিনি। তাই সব মিলিয়ে শুভেন্দুর দিল্লি সফর ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।