এসএসসি’র নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর দু’টি ফ্ল্যাট মিলিয়ে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
এই ঘটনায় হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা পাচারের সম্ভাবনা রয়েছে বলেই ইডির অনুমান৷ এই খবরের ভিত্তিতেই প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। বাংলাদেশে পার্থ ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েক জনকে ইতিমধ্যে চিহ্নিতও করা হয়েছে৷
যাঁরা পার্থর হয়ে কাজ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই তালিকায় রয়ছেন এক জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক সদস্য৷ রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত এক সেনাকর্তাও৷
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের চালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে যে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়, সেই ছবি প্রকাশিত হতেই ‘বাংলাদেশ যোগ’-এর বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে।
৫০০ এবং দুই হাজার টাকার নোটের স্তুপের মধ্যে দেখা যায় একটি সাদা ব্যাগ৷ যার গায়ে কালো রঙে আঁকা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি৷ তাছাড়া টাকাগুলি যে ভাবে শক্তপোক্ত সাদা খামে ভরে ‘স্কচ টেপ’ দিয়ে প্যাক করে রাখা হয়েছিল, তা সাধারণত হাওয়ালায় পাচারের জন্যই ব্যবহার করা হয়৷ যা বাংলাদেশি গোয়েন্দাদেরও নজর এড়ায়নি৷ তাই প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় পার্থর বাংলাদেশ যোগের তদন্ত৷
ইডি-র সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্থের টাকার একটা অংশ বেশ কয়েক দফায় হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশে গিয়েছে৷ এবং সেই টাকার একটা একাংশ বাংলাদেশে বেনামে জমি-বাড়ি কেনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ বাকি অংশ সম্ভবত তৃতীয় কোনও দেশে চালান করা হয়েছে৷ তেমনই ইঙ্গিত পেয়েছে ইডি৷ প্রাথমিক তদন্তে এই কাজে কলকাতার দু’টি ব্যবসায়িক সংস্থার যোগ খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে একটি রেডিমেড পোশাকের কারবারি, অন্যটি শিক্ষার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ওই পোশাক কারবারি সংস্থাটির দু’দেশেই ব্যবসা রয়েছে।
বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পোশাক আমদানি করে এ দেশে তারা বিক্রি করে৷ অন্যদিকে, শিক্ষার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাটি বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং ও কারিগরি কলেজ এবং ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল খুলতে আগ্রহী। সে দেশের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে এই সংস্থার স্বার্থ দেখেন অবসরপ্রাপ্ত এক সেনাকর্তা এবং এক জন প্রতিমন্ত্রী৷
ইডি সূত্রে দাবি, পার্থ যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁর এক বান্ধবী (অর্পিতা নন) নিয়মিত বাংলাদেশে গিয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ তৈরি করেছিলেন৷ ওই বান্ধবীই বাংলাদেশে পার্থের জমি-বাড়ি দেখাশোনা করতেন৷
প্রথমিক তদন্তের পর বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সেখানকার এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সঙ্গে ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠতা’ তৈরি করে তাঁকে ব্যবহার করেছিলেন পার্থক ওই বান্ধবী। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদের হাত ধরেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে৷