আশঙ্কা জাগছে, টুইন টাওয়ার ধ্বংসে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে চলেছে মানবজীবনে

বহু প্রস্তুতির পর উপস্থিত হলো সেই সময়। অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি চলছিল। রবিবার আসে সেই চরম মুহূর্ত। ঘড়িতে তখন দুপুর আড়াইটে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হয় ‘অপারেশন ডিনামাইট’।

মাত্র ৯ সেকেন্ডে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে নয়ডার টুইট টাওয়ার। শেষ হয় ৯ বছরের লড়াই৷ প্রায় ৪ হাজার কেজি বিস্ফোরক দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল গগনচুম্বী ইমারত৷ বেআইনি ভাবে নির্মীত অ্যাপেক্স ও সিয়ানি নামের এই দুটি টাওয়ার ছিল কুতুব মিনিরের চেয়েও উঁচু। ৩২ তলার অ্যাপেক্সের উচ্চতা ছিল ১০৩ মিটার।

আর ৩০ তলার সিয়ানির উচ্চতা ছিল ৯৭ মিটার। এই জোড়া টাওয়ার ধ্বংসের ফলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি নির্মাণকারী সংস্থার। টুইন টাওয়ার ভাঙার খরচ হয় ২০ কোটি টাকা৷ দাবি, সেই টাকাও নেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকেই৷

এদিকে, জোড়া অট্টালিকা ভেঙে পড়তেই ধুলোর চাদরে ঢেকে যায় গোটা এলাকা৷ এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তকমা রয়েছে রাজধানীর গায়ে৷ এরই মধ্যে পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, রাজধানীর বুকে দূষণের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে৷

এই বিপুল পরিমাণ ধুলোর প্রভাবে দুষণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপরেও ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে চলেছে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকাবাসীর উপর৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিপুল ধুলোর প্রভাবে পরিবেশের ক্ষতি হবে। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের জেরে ক্ষতি হবে পাখিদের। এমনিতেই দীপাবলির বাজি, পড়শি রাজ্যের ফসলের গোড়া পোড়ানো থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দমবন্ধ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে দিল্লিকে৷

এবার তার চেয়েও গাঢ় মেঘ জমা হতে চলেছে দিল্লির আকাশে৷ এদিকে, টুইন টাওয়ারে বিস্ফোরণের জেরে ইতিমধ্যেই আশেপাশের বেশ কয়েকটি নির্মাণে ফাটল দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে, যে ইমারতগুলির গায়ে ফাটল দেখা যায়নি, সেগুলির ভীত নড়বড়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷

এদিন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সময় ৫০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ কিন্তু, জোড়া টাওয়ার ধ্বংসের পর যে ৮০ হাজার টন ধ্বংস্তূপ জমা হয়েছে, তা সরাতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লেগে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷

এই ধ্বংসস্তূপ সরাতে ১৩০০ বার যাতায়াত করতে হবে ট্রাক-লরিকে। উড়বে বিশাল ধুলোর চাদর৷ তবে জানা যাচ্ছে, এই ৮০ হাজার টন ধ্বংসস্তুপের মধ্যে ৫০ হাজার টন এই টুইন টাওয়ারের বেসমেন্টেই পুঁতে দেওয়া হবে৷

এর ফলে ভূগর্ভস্থ জলের উপর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এই বিপুল ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নিয়ে গিয়ে যেখানে ফেলা হবে, সেই জমির চাষবাসও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷

জোড়া টাওয়ার ভেঙে পড়তেই নয়ডার সেক্টর 93A-তে ওঠে ধুলোর ঝড়৷ গাছপালার গায়ে পুরো ধুলোর আস্তরণ৷  দূষণের মাত্রা মাপার দন্য আনা হয় বিশেষ ডাস্ট মেশিন।  গগনচুম্বী নির্মাণ ভেঙে পড়তেই জল-বাতাসের মিশতে শুরু করে সূক্ষ্ম ধূলিকণা।

যাতে রয়েছে সিমেন্ট, বালি, কাঁকড়, চুন, কাঠের গুঁড়ো, তামা, পলিভিনাইল ক্লোরাইড এবং সর্বোপরি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরকে ব্যবহৃত উপাদান৷ যা মানবশরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে আগামী দিনে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকার মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা, ক্যানসার, হৃদরোগে এবং স্টমাক আলসারের মতো রোগের প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।