পচিমবঙ্গের মধ্যে সব চেয়ে বেশি ঝড় আছড়ে পরে এর ওপর দিয়ে৷ বিগত কয়েক বছরের একের পর এক প্রকৃতির তান্ডব দেখেছে এই জায়গা এবং এই জায়গার মানুষজন৷ বারংবার বিপদের সম্মুখীন হয়েছে তারা৷ কথা হচ্ছে সুন্দরবন নিয়ে৷ প্রাকিতিক ঝড়ের সাথে সাথে রয়েছে পদে পদে অন্যান্ন বিপদও৷ এখানকার মানুষের জীবনও তাই সংগ্রামী৷ ঘন ঘন আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড়৷ যা ছত্রভঙ্গ করেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে৷ সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের জেলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায় এই সুন্দরবের উপর দিয়েই৷
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) পুণের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এখানে ঘূর্ণিঝড়ের প্রত্যাবর্তনের সময়কাল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত৷ মাত্র ১.৬৭ বছর৷ তীব্র ঝড়ের ফিরে আসার ব্যবধান ২.৬১ বছর৷ ২০২১ সালে ১০টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে দুটি বড় ঘূর্ণিঝড় দেখেছে সুন্দরবন৷ প্রথমে যশ, তারপর জাওয়াদ৷ ১৯৬১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উপকূলবর্তী জেলাগুলি ৫০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৯০ কিলোমিটার)-এর মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন পর্যবেক্ষকরা৷ তাঁরা দেখেছেন ওডিশার উপকূলবর্তী কেন্দ্রপাড়া, অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর, পশ্চিমবঙ্গের পূর্বমেদিনীপুরও কিন্তু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ৷
কেন্দ্রপাড়ার ঘূর্ণিঝড় প্রত্যাবর্তনের সময়কাল ১.৯৪ বছর৷ তবে নেল্লোর এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের প্রত্যাবর্তনের ব্যবধান ২ বছর। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের নিরিখে দক্ষিণ ২৪ পরগণার পরেই রয়েছে ওডিশার বালেশ্বর এবং তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরম৷ এই দুই জায়গায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রত্যাবর্তনের সময়কাল যথাক্রমে ২.৮৬ বছর এবং ৩ বছর।
আইএমডি পুনের জলবায়ু বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী পুলক গুহঠাকুরতা বলেন, “এই সমীক্ষাটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে দক্ষিণ ২৪ পরগণার উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যে সুন্দরবন দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলির মধ্যে একটি।” গুহঠাকুরতা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রত্যাবর্তন এবং অনন্য বিশ্লেষণটি হ্যারিকেন রিস্ক সম্পর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর টেকনিক্যাল মেমোরেন্ডামের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল৷
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, ‘‘বিগত তিন বছরের পরিস্থিতির সঙ্গে এই সমীক্ষা অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ৷ এই সময়ের মধ্যে সুন্দরবন একের পর এক বড় ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছিল৷ ২০১৯ সালে বুলবুল, ২০২০ সালে আম্পান, ২০২১ সালে ইয়াস এবং জাওয়াদ। এর আগে ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লা এই অঞ্চলের উপর ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল৷’’
এই সময়ের মধ্যে ৯টি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল সুন্দরবন৷ যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ এর পরেই রয়েছে শ্রীকাকুলাম এবং গুঞ্জাম জেলা৷ এখানে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা যথাক্রমে ৬ এবং ৫৷ আইএমডি বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের প্রায় ৭০ শতাংশ তাণ্ডব সহ্য করতে হয়েছে সুন্দরবনকে৷ যা সুন্দবনকে ‘সাইক্লোনের রাজধানী’ করে তুলেছে৷ তবে তীব্রতর ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পূর্ব মেদিনীপুর৷ এর পরেই রয়েছে ওডিশার বালেশ্বর৷ আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা৷