কেজিএফ সোনার খনির আসল রহস্য

২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কেজিএফ: চ্যাপ্টার ১ এর দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ চ্যাপ্টার ২-টি মুক্তি পেয়েছে গত ১৪ এপ্রিল। মূলত, সোনার খনি অর্জনের লড়াইয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এই সিনেমার গল্প। যেখানে এবার অভিনেতা যশ এবং সঞ্জয় দত্তকে প্রধান ভূমিকায় দেখানো হয়েছে । কিন্তু আপনি কি জানেন? কেজিএফ ছবির গল্পটি একটি সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে! কারণ ভারতে একসময় কেফিএফ নামে একটি সত্যিকারের সোনার খনি ছিল। যদিও ব্রিটিশদের কারণে বর্তমানে খনিটি সম্পূর্ণ নির্জন।

উল্লেখ্য, কেজিএফ এর পুরো নাম হল ‘কোলার গোল্ড ফিল্ড’। এটি কর্ণাটক রাজ্যের কোলার জেলার একটি খনির এলাকা। ব্রিটিশ রাজত্বের সময় এই স্থানটি স্বর্ণ উৎপাদনের জন্য ছিল সুপরিচিত। সারা বিশ্বে বিখ্যাত ছিল এই জায়গা।  ১৯০৫ সালে, ভারত বিশ্বের সর্বাধিক সোনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৬ তম স্থানে ছিল ভারত। কোলারকে বলা হয় বিশ্বের দ্বিতীয় গভীরতম খনি এবং ১২১ বছর ধরে এখান থেকে সোনা খনন করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুসারে, ব্রিটিশ রাজের সময় কোলার থেকে ৯০০ টনেরও বেশি সোনা তোলা হয়েছিল।

এদিকে গোল্ড গাইড তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের প্রাচীনতম এই সোনার খনি বর্তমানের ব্যাঙ্গালোর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কর্ণাটকের কোলারে অবস্থিত। এখানে খ্রি.পূ.প্রথম শতাব্দি থেকে শুরু হয়ে ৯০০ এবং ১০০ শতাব্দির চোলা সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে ১৬০০ শতাব্দির বিজয়নগর সাম্রাজ্য হয়ে মাইসোরের রাজা টিপু সুলতানের সময় ১৮০০ শতাব্দি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এখানে সোনা খনন হয়েছিল। এরপর ১৯০০ শতকের শুরুর দিকে খনন প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নেন ব্রিটিশ খননকারী কোম্পানি জন টয়লার। ১৯২০-র দশকে এই খনিতে বৈদ্যুতিক পাওয়ার স্থাপন করা হয়, এই সময় দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনুপস্থিত ছিল। ১৯৩০-এর দশকে গভীরে খননের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেষ্টার থেকে নিয়ে আসা হয়। যা বিশ্বের সবথেকে বড় উইন্ডিং ড্রাম ছিল। এছাড়াও জন টয়লার গোষ্ঠীর স্থাপন করা বেশিরভাগ মেশিনপত্রই ৫০ থেকে ১০০ বছরের পুরনো হলেও ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত কার্যকর ছিল বলে খবর। জানা গিয়েছে আধুনিক খননের এই পর্যায়টি ১৮৮০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ১২০ বছরের জন্য ছিল। এরপর কেজিএফকে সরকারের-অধিগ্রহন করে এবং ধীরে ধীরে ভারত গোল্ড মাইনস বন্ধ হয়ে যায় সেখানে। কারন, তখন এই খনি থেকে প্রতিবছর খনন প্রক্রিয়া চালানোর খরচও উঠে আসছিলনা বলে খবর। তবে কেজিএফ-এর জীবন হয়তো এখনও শেষ হয়নি বলে মনে করছেন কর্ণাটকের বসিন্দারা। কারন, ২০১০ সালের জুলাই মাসে, শীর্ষ আদালত জানয়েছিল যে ভারতে সোনার খনিগুলি সমেত খনিগুলির নিলাম করে খনন প্রক্রিয়া আবার শুরু হতে পারে। এরপর ২০১৬ সালে, নরেন্দ্র মোদী সরকার কেজিএফ-এর নিলাম ঘোষণা করে। ফলত আগামি কয়েক বছরের মধ্যে, দক্ষিণভারতের প্রথম আলোকজ্জ্বল শহর যা বর্তমানে ভূতের রাজত্ব, সেই কোলারে আবার আলোতে জ্বলে ওঠার সম্ভাবনায় রয়েছে।