টিকাকরণ নিয়ে উত্তাল রাজ্যে। এই মুহূর্তে রাজ্যের সব চেয়ে বড় চাঞ্চল্যকর ও বিতর্কিত খবর হল ভুয়ো ভ্যাকসিন কান্ড। উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুরু হল রাজনৈতিক চাপানউতোর। এবার ভুয়ো টিকা কাণ্ডে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। কসবায় ভুয়ো টিকাকরণ কাণ্ডের জট খুলতে সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন। এই দাবি তুলে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করলেন আইনজীবী সন্দীপন দাস। আগামী সপ্তাহে মামলার শুনানি হতে পারে। কোন বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটি চলবে, তাও জানা যাবে আগামী সপ্তাহে।
তাঁর দাবি, ভুয়ো টিকাকাণ্ডে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ জড়িত আছে। রাজ্য পুলিশ সত্য উদঘাটন করতে পারবে না। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তদন্তভার দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।এদিন আবেদনে মামলাকারী আইনজীবী সন্দীপন দাস জানিয়েছেন, দেবাঞ্জন দেবের ভুয়ো শিবির থেকে করোনা টিকা নিয়ে প্রতারিত অনেকেই। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয়। কীভাবে ওই ব্যক্তি এতদিন ধরে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে টিকা সংগ্রহ করল, পুরসভার অনুমোদন না নিয়ে কীভাবেই বা এতগুলো জায়গায় শিবির চালাল – এসব প্রশ্নের জবাব তো সকলেই চান।
এদিকে, ভুয়ো টিকা কাণ্ডে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। পুরো বিষয়টা খতিয়ে ১০ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছে লালবাজার। সেখানে প্রতারণা দমন, ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন এবং বিশেষ সেলের আধিকারিকরদের ১০ জনকে রাখা হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি আগাগোড়া বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে কাদের যোগাযোগ ছিল, বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম বাজার থেকে তোলা এবং সাধারণ মানুষকে ভুয়ো টিকা দিয়ে প্রতারণা, গোটা পর্বে তাঁর সঙ্গে কাদের সংযোগ ছিল, তা তদন্ত করে দেখা হবে। গোটা ঘটনায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের দিকটি খতিয়ে দেখবে সিট।
গত বুধবার কসবার ভুয়ো টিকা ক্যাম্পের বিষয়টি সামনে আসে। সেদিনই গ্রেফতার করা হয় মূল পাণ্ডা দেবাঞ্জন দেবকে। যিনি নিজেকে আইএএস অফিসার এবং কলকাতার জয়েন্ট মিউনিসিপাল কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হযেছে ভুয়ো পরিচয়পত্র। অভিযোগ, তাতে কলকাতা পুর কমিশনার বিনোদ কুমারের জাল সই ব্যবহার করা হয়েছে।
তারইমধ্যে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষনেতার সঙ্গে দেবাঞ্জনের ছবি সামনে এসেছে। কলকাতা পুরনিগমের অনুষ্ঠানও তাঁকে দেখা গিয়েছে। তাতে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল। তা নিয়ে আক্রমণ শানাচ্ছে বিজেপি, সিপিআইএমের মতো বিরোধী দল। গেরুয়া শিবিরের তরফে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানানো হয়। হাইকোর্টে মামলা করার বিষয়েও জানায় বিজেপি।
পাশাপাশি, তালতলায় দেবাঞ্জনের নাম থাকা বিতর্কিত রবীন্দ্র-মূর্তির ফলক ভেঙে ফেলল কলকাতা পুরসভা। কবিগুরুর মূর্তির নিচে সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়কের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছিল দেবাঞ্জনের নাম। রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তির ফলকে নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে ভুয়ো আইএএস পরিচয় দিয়ে ধৃত দেবাঞ্জনের নামও ছিল। এদিন পুর প্রশাসকমণ্ডলীয় সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, যে ফলক বসানো হয়েছিল, তা কলকাতা পুরসভা বসায়নি। বিতর্ক তৈরি হতেই ভাঙা হয় সেই ফলক। প্রথমে কালি লেপে দিয়ে নাম ঢাকা হয়। কিন্তু বিতর্ক ধামাচাপা দিতে ফলক পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই আবক্ষ মূর্তির ফলক স্থাপন হয়।