আধুনিকতার যাঁতাকলে ব্রাত্য খাগের কলম

নদী পাশের চড়ে সারি সারি আলুর,ধানের কিংবা অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় শস্যের ক্ষেত।রয়েছে বেশ সংখ্যক বাড়িও।কোনোটি পাকা তো কোনোটি আবার টিনের। কিন্তু নেই সেই নলখাগড়ার জঙ্গল।নলখাগড়া আবার কি! এটি হলো সেই গাছ যে গাছের বৃন্ত থেকে তৈরি হয় খাগের কলম। যা কিনা সরস্বতী পুজোর অন্যতম উপকরণ। আর এই খাগের কলমই বর্তমানে বিরল হতে বসেছে শতাব্দী প্রাচীন এই শহরের বাজার থেকে। বিকল্প হিসেবে কখনও বাজারে এসেছে খড়ের কিনবা থার্মোকলের কলম। কোথাও বা সেই খাগের কলম মিলেলেও তার দাম বেশি। এক দোকানির কথায়, এবার তো এই খাগের কলমকে অ্যান্টিক হিসেবে ঘোষনা করবার সময় এসেছে।বাগদেবীর মূর্তির পায়ের কাছে বসে খাগের কলম কাঁচা দুধে ডুবিয়ে বেলপাতায় ‘ওম সরস্বতৈঃ নমঃ’ লেখার কথা বলতেই অনেকেই ছেলেবেলার দিনগুলোতে ফিরে যান।নস্টালজিয়া গ্রাস করে।

খাগের কলম কি এবং পুজোয় এর গুরুত্ব কি সেটা এখনকার প্রজন্মের অনেকেই জানেন না। আজকের ক্ষুদেদের প্রশ্ন করতেই ‘অবাক জলপান’ গল্পের শিশুটির মতো চেয়ে থাকে অভিভাবকদের দিকে তাকিয়ে। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাকে দুষলে হবে না,বাংলা মাধ্যমের শিশুরাই আজ ভুলতে বসেছে এই খাগের কলমকে। পুজোর দায়িত্ব পাওয়া কলেজ পড়ুয়া রাজা করকে জিজ্ঞেস করলে তার চেক লিস্টেই নেই এই খাগের কলম। তার উত্তর, ও! এটাও লাগে নাকি!প্রশ্নটা হলো ওই নদীপাড়ের আলু, ধান চাষ নিয়ে কথা হলো কেন? না আগে যেখানে এই নলখাগড়ার জঙ্গল ছিল সেখান থেকেই কান্ড কেটে এনে সেগুলো দিয়ে খাগের কলম তৈরির ইতিহাস জানেন না সেই তিস্তা পাড়ের এখনকার প্রজন্ম। অনেককে প্রশ্ন করেও উত্তর না মেলায় ৬ নম্বর স্পারের ওখানে এক বৃদ্ধ বললেন, যে হ্যাঁ আগে এখানে নলখাগড়ার জঙ্গল ছিল। কিন্তু ওগুলো পরিষ্কার না করলে আমরা অন্য চাষ করতে পারছিলাম না বলে সব কেটে চাষের জমি বানানো হয়েছে।

আমাদের জীবন বাঁচানো বেশি জরুরি ছিল নলখাগড়ার চেয়ে।এভাবেই হয়তো হারিয়ে যেতে থাকে এই নলখাগড়া এবং খাগের কলম।বেদ-শ্রুতি থেকে শুরু করে কালি এবং কলমের আবিষ্কার দীর্ঘ যাত্রাপথ। কিন্তু প্রতিদিনের আধুনিক আবিষ্কারের ফলে যেখানে বর্তমান যুগের পেনেরই অস্বিত্ব সঙ্কটে সেখানে খাগের কলম নিয়ে আলোচনা! মনের ভাব প্রকাশ করে বহু দূরের প্রিয়জনকে কিছু না লিখেই যেখানে বার্তা পাঠানো যায় সেখানে বছরের একটা দিনে যে গাছের কান্ড লাগবে সেটা কে মনে রাখবে। শহরের এক দশকর্মা ভাণ্ডারে গিয়ে খাগের কলম আছে কিনা প্রশ্ন করতেই দোকানি সঞ্জয় দাস বললেন, ওই যে রাখা আছে নিয়ে নিন। আসল কিনা জিজ্ঞেস করা হলে বিরক্ত হয়েই বললেন হ্যা আসল। থার্মকলের গুলো ওদিকে আছে। এগুলো শেষ হলে ওগুলো সামনে রাখব। এখন ওসব আর কেউ দেখে না।