নতুন স্টেশন ভবন তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে নিউ জলপাইগুড়িতে (এনজেপি) যাত্রীদের এ রকম নানা সমস্যা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। আগের মতোই বিভিন্ন সময়ে বন্ধ থাকছে স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি বা এসকালেটর এবং লিফ্ট। স্টেশনে ঢোকার ক্ষেত্রে একাধিক জায়গায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যথাযথ দিগ্নির্দেশিকা বোর্ড নেই। ফলে, স্টেশনে নেমে যাত্রীরা সমস্যায় পড়ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা বেড়েছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। এসকালেটর বন্ধ থাকায় বয়স্কেরা বিপদে পড়েন। যত দিন স্টেশন উন্নয়নের কাজ চলবে তত দিন কি এ রকম অসুবিধাই পোহাতে হবে সবাইকে, এ প্রশ্নই উঠেছে যাত্রীদের তরফেপ্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে পার্কিং এলাকা দূরে সরে যাওয়ার ফলে অনেকটা পথ হেঁটে গিয়ে গাড়ি ধরতে হচ্ছে বয়স্কদের। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রেল আধিকারিকেরা। কলকাতার এক যাত্রী পিয়ালি সিংহ বলেন, ‘‘বৃদ্ধা মাকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলাম। হুইলচেয়ারে করে তাঁকে স্টেশনের বাইরে ছেড়ে দিতে ৮০০ টাকা কুলিকে দিতে হয়েছে।’’
লিফ্ট এবং এসকালেটর মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা এনজেপিতে আগে থেকেই ছিল। কিন্তু পুজোর পরে, শীতের শুরুতে প্রচুর পর্যটক এনজেপি হয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক বেড়েছে বলে অভিযোগ। শুধু লিফ্ট, এসকালেটর এবং কুলির সমস্যা নয়, বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে এনজেপি থেকেই যাওয়ার ক্ষেত্রেও দালাল-চক্র এলাকায় সক্রিয় বলে অভিযোগ যাত্রীদের।এক-এক যাত্রীর কাছে এক-এক রকম ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।গত বছর থেকেই ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এনজেপি স্টেশনের ভোল বদলের কাজ শুরু হয়েছে। অনেক রকমের অস্থায়ী অফিস সরাতে হয়েছে। পার্কিং এলাকা সরাতে হয়েছে বলে রেল সূত্রের দাবি। এ জন্য স্বাভাবিক ভাবেই অসুবিধা বেশ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। যাত্রীদের দাবি, এনজেপি স্টেশনে ঢুকতে অনেকটাই কষ্ট করতে হচ্ছে। বর্ষার সময় পুরো এলাকাটি জল-কাদায় ভরে ছিল। একটি অস্থায়ী রাস্তা বা কিছুটা দূরত্ব পর্যন্ত মাথার উপরে শেড ছিল না। কলকাতার আর এক যাত্রী অয়ন উপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়ি ধরতে অনেকটা যেতে হচ্ছে। টিনের ঘেরাটোপে দিগভ্রান্ত হচ্ছিলাম।’’
স্টেশন চত্বরে ঢোকা থেকে প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক জায়গায় টিনের ঘেরাটোপ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন রাস্তা, কোন দিকে গিয়ে উঠছে, সে রকম পর্যাপ্ত দিগ্নির্দেশিকাও থাকছে না। টিকিট কাউন্টারও সরে গিয়েছে। অনেক সময় যাত্রীদের কাছে এই তথ্য না থাকায় তাঁরা সেখানে গিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। অনেকেরই ক্ষোভ, দীর্ঘ সময় ধরে এনজেপিতে কাজ চলবে। সেই সময় যাত্রীদের ন্যূনতম কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত। না হলে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা— মার খেয়ে যেতে পারে। যাত্রী-সমস্যা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তর-পূর্ব সীমান্তরেল কর্তৃপক্ষ।