গতকাল বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছে রাজ্যের শাসক শিবির। চার পুরনিগমের ভোটেও তৃণমূলের জয়জয়কার৷ সবুজ আসানসোল, বিধাননগর, চন্দননগর ও শিলিগুড়ি কর্পোরেশন। সবুজ ঝড়ে কার্যত দাঁড়াতেই পারল না বিরোধীদের৷ তাদের বহু পিছনে ফেলে চারটি পুরনিগমই দখল নিল তৃণমূল। এরইমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বামেদের অবস্থান৷ দুই পুরনিগম-চন্দননগর ও বিধাননগরে বিজেপিকে পিছনে ফেলে ভোট শতাংশের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বামফ্রন্ট। শিলিগুড়ি ও আসানসোলে বিজেপি দ্বিতীয় স্থান দখল করলেও তাদের থেকে খুব বেশি দূরে নেই বামফ্রন্ট।
একুশের বিধানসভা ভোটের পর রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী হয়ে উঠেছিল বিজেপি৷ বিধানসভায় ৭৭টি আসন পায় গেরুয়া শিবির৷ তবে দিন কয়েক পর থেকেই বদলাতে থাকে সমীকরণ৷ একের পর এক বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেয়৷ আলগা হতে থাকে বিজেপি’র ভিত৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম বা কংগ্রেস একটা আসনেও জিততে পায়নি। অথচ বিজেপি’র ঝুলিতে ছিল ৭৭ টি আসন৷ কিন্তু তারপর থেকে যে কটি ভোট হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে ভোট শতাংশের নিরিখে বিজেপি’কে পিছনে ফেলেছে বামেরা৷ ক্রমশ পিছু হঠেছে বিজেপি৷ চার পুরনিগমের ভোটের পর আরও একবার প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বিরোধী রাজনীতির ভরকেন্দ্র ঘুরছে বামফ্রন্টের দিকে?
বিধাননগর পুরনির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামফ্রন্ট। অথচ বিধানসভা ভোটের নিরিখে এখানে দ্বিতীয় স্থানে ছিল গেরুয়া শিবির৷ শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত বিধাননগরে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৭৩.৮২ শতাংশ। সেখানে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৮.৩৫ শতাংশ ভোট। বামফ্রন্ট পেয়েছে ১০.৬৬ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখে বিজেপি’কে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামফ্রন্ট। আর লাস্ট বয় কংগ্রেস৷ তারা পেয়েছে ৩.৪৯ শতাংশ ভোট।
আসানসোল পুরসভা অঞ্চলে দুটি বিধানসভা আসন দখলে রয়েছে বিজেপির। কিন্তু পুরভোটে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১৫.৯০ শতাংশ। এক্ষেত্রে তারা দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও খুব কাছেই রয়েছে বামফ্রন্ট। তাদের প্রাপ্ত ভোট প্রায় ১২ শতাংশ। ২ শতাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে কংগ্রেস।
চার নিগমের মধ্যে তৃণমূলকে একমাত্র লড়াই করে জিততে হয়েছে শিলিগুড়িতে৷ এখনও পর্যন্ত সেখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৮.১৪ শতাংশ। ২৩.৮৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। অথচ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি বিধানসভায় জয়ী হয়েছিল বিজেপি। এদিকে বামফ্রন্ট তৃতীয় স্থান দখল করলেও প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিজেপির থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই বামফ্রন্ট। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১৭.১৯ শতাংশ। কংগ্রেসের পেয়েছে ৪.৬৪ শতাংশ ভোট। কলকাতা পুরভোটেও দেখা গিয়েছিল বিজেপি’কে টেক্কা দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামেরা৷ চার পুরনিগমের ভোটেও সেই ধারা অনেকটাই বজায় রাখল বামফ্রন্ট৷ বিরোধী অভিমুখ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বাম-বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে একটা বোঝাপড়ায় সম্পর্ক রয়েছে৷ ওরা জাগাই-মাধাই-গদাই৷