প্রয়াত নারায়ণ দেবনাথ

ব্যর্থ হলো সমস্ত প্রচেষ্টা৷ জীবনাবসান হলো এক কিংবদন্তির৷ বাংলা কমিকসের দুনিয়ায় নক্ষত্রপতন৷ চলে গেলেন বাংলা চিত্রকাহিনি বা কমিকসের প্রাণপুরুষ নারায়ণ দেবনাথ৷ বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। প্রায় ২৫ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লড়াই করছিলেন তিনি৷ সেই লড়াই শেষ! মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ মিন্টো পার্কের একটি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাঁদা, ভোঁদা, বাঁটুল, নন্টে, ফন্টে, কেল্টুদের স্রষ্ঠা৷ 

বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন শিল্পী-সাহিত্যিক। কয়েক প্রজন্মের বাঙালি কিশোরবেলার সঙ্গী হয়ে রয়েছে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলি। শিবপুরের বাড়ির ছোট্ট ঘরটির টেবিল-চেয়ারে আজ ধুলোর পরত৷ পুরনো খবরের কাগজের নীচে চাপা পড়েছে সমস্ত কাগজ পত্র৷ চেবিলের পাশে শুকিয়ে গিয়েছে রং তুলি, স্কেচ পেন। ঘরের বাঁ দিকে রয়েছে একটা সোফা৷ তার ঠিক উপরে একটি শো-কেস৷ তাতে সারি দিয়ে সাজানো নানান সম্মান।

সেই শো-কেসের কাঁচেও ধুলোর আস্তরণ। বছর খানেক আগেও তেমনটা ছিল না৷ গত ছয় দশক ধরে রোজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই ঘরটিতে বসেই রং-তুলি পেনসিল নিয়ে আঁকিবুকি কাটতেন তিনি৷ শরীর ন্যূব্জ হওয়ার পর থেকেই আর সেখানে এসে বসতেন না চেয়ারের মালিক৷ তার পর অসুস্থতার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আজ সকালে প্রয়াত হলেন ‘পদ্মশ্রী’ নারায়ণ দেবনাথ৷ 

গত ২৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নারায়ণ দেবনাথকে৷ ফুসফুস থেকে শুরু করে কিডনি, একাধিক বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি৷ রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও কমছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৬ জানুয়ারি তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। তবে শেষ রক্ষা আর হল না৷ আজ সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলা কমিক জগতের প্রাণপুরুষ৷

হাসপাতাল সূত্রে খবর, সকাল থেকেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছিল৷ হৃদ্‌যন্ত্রে গুরুতর সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। দ্রুত রক্তচাপও ওঠানামা করছিল। তাঁকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা চালান চিকিৎসকরা৷ কিন্তু তিনি আর চিকিৎসায় সাড়া দেননি৷ এর আগেও একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল শিল্পীকে। তাঁর চিকিৎসার ভার নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাঁর জন্য তৈরি করা হয়েছিল চিকিৎসকদের পৃথক টিম৷ 

নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যশিল্পী ও কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল প্রভৃতি চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ সব বয়সের পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন।… আমি নারায়ণ দেবনাথের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’

১৯২৫ সালে হাওড়ার শিবপুরে জন্ম গ্রহণ করেন শিল্পী নারায়ণ দেবনাথ। ছোট থেকেই শিল্পের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর৷ বড় হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আর্ট কলেজেও৷ কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতায় বন্ধ হয় সেই পাঠ৷ পরে তিনি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার হয়ে কাজ শুরু করেন৷ ২০১৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার এবং বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন নারায়ণ দেবনাথষ ২০২১ সালে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে তাঁকে ভূষিত করে ভারত সরকার।