যত সময় এগোচ্ছে তত এক এক করে বাড়ছে সম্পত্তির পরিমাণ। গত বছর নভেম্বর মাসের কথা৷ ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া অঞ্চলের মহুলবনি মৌজায় প্রকাণ্ড খামারবাড়িতে জাঁকজমক করে কালীপুজোর আয়োজন করেছিলেন অতনু গুছাইত। অথচ, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে তিনি সপরিবার ফেরার!
কোলাঘাটের প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে আগেই। গত মাসে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তমলুক আদালত।
অতনু, তাঁর স্ত্রী মানসী এবং অতনুর ভাই শান্তনু (লাল) সকলেই নিজেদের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করতেন৷ গত বছর ঝাড়গ্রামের খামারবাড়ির কালীপুজোয় জঙ্গলমহলের কয়েকজন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরও দেখা মিলেছিল৷ খামারের দুই কর্মীও সে কথা জানিয়েছেন৷
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পর ইডির নজর এখন প্রতিটি জেলায় মন্ত্রী ঘনিষ্ঠদের অগাধ সম্পত্তির উপর। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা স্বীকার করে নিয়েছেন, ২০১৩ সালে স্থানীয় কুণ্ডু পরিবারের কাছ থেকে অতনু তাঁর মা মিতা ও ভাই শান্তনুর নামে ২৯ বিঘা জমি কেনেন।
দু’বছরের মধ্যে সেখানে মাথা তুলে দাঁড়ায় প্রকাণ্ড খামার। এই খামারবাড়ির ভিতরে রয়েছে ফল ও ফুলের গাছ, ৭টি পুকুর, অতিথিশালা, গো-পালনকেন্দ্র। ‘এবি গ্রিন ফার্ম হাউস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে ওই খামারবাড়ির মূল ফটকে এখন তালা ঝুলছে।
খামারের দেখভালের কাজ করছেন দুই কর্মী রয়েছেন৷ মুড়াকাটি গ্রামের অচিন্ত্য চালক ও বাঁধগোড়ার রবি খামরুই। দু’জনেই জানালেন, বছর খানেক হল তাঁদের বেতন বন্ধ। কিন্তু, ৭টি গরু আর ৫টি অ্যালসেশিয়ান কুকুরের জন্যই তাঁরা খামার ছেড়ে যেতে পারছেন না।
গরুর দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে গো খাদ্য আর কুকুরদের জন্য মাংস কেনা হচ্ছে। বছর দেড়েক আগে পুকুরের সব মাছ তুলে নেওয়া হয়৷ তার পর ঝাড়গ্রাম বাজারে তা বিক্রি করে দেন মালিকরা। কয়েক বছর আগেও দৈনিক মজুরিতে গ্রামের লোক এই খামারে কাজ করতে আসতেন। এখন আর কিছু বন্ধ।
খামারের ভিতর দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে একটি অসম্পূর্ণ মন্দিরও রয়েছে৷ চলতি বছর ওই মন্দিরে একটি কালীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। কর্মীরা জানালেন, এক সময় এই খামার রমরমিয়ে চলত৷ তখন স্ত্রী ও মা-কে নিয়ে এখানে আসতেন অতনু। স্থানীয় বাসিন্দারা সকলে প্রায় একবাক্যে জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রামেও বহু মানুষের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা হয়েছে।
সেই টাকা তুলতেন খামারেরই এক কর্মী৷ তিনিও ঝাড়গ্রাম শহরেই থাকতেন। ওই কর্মীর স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রী-সহ তাঁর কয়েক জন আত্মীয় সরকারি ডি গ্রুপের চাকরিও পেয়েছেন৷ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে জানান, অতনু গুছাইতের সবকটি ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়েও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁকে ধরার চেষ্টা চলছে।