করোনা আবহে শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ থাকায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ

বিগত দু বছর বেশি সময় ধরে কারণে সংক্রমনের প্রভাবে বন্ধ রয়েছে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্টান। বিপন্ন হচ্ছে শৈশব৷ দেশজুড়ে ক্রমশ জোরাল হচ্ছে স্কুল খোলার দাবি৷ এরইমধ্যে প্রকাশ্যে এল এক ভয়ঙ্কর রিপোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শুধু শৈশব নয়, তাদের ভবিষ্যতও নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ আর সেই রিপোর্টে সিলমোহর দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। ইউনিসেফ তার রিপোর্টে স্পষ্ট জানিয়ে দিল, করোনা গোটা বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। দীর্ঘ দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে ৬১ কোটি ৬০ লক্ষ পড়ুয়া।

সংক্রমণ রুখতে ২০২০ সালের গোড়া থেকেই বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি৷ শুরু হয় অনলাইন পঠন পাঠন৷ কিন্তু তাতে দেখা যায় বেশ কিছু বৈষম্য৷ বহু পড়ুয়া বঞ্চিত হয় শিক্ষার আলো থেকে৷ স্কুলের পথ ভুলে কচিকাঁচারা মেতে উঠেছে খেলাধুলোয়৷ পড়শোনার চেয়ে অনেক বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে অনলাইন গেমে। একাংশ আবার পেটের টানে নেমেছে রোজগারের পথে৷ ক্রমেই বেড়েছে স্কুলছুটের সংখ্যা। মাঝে কিছুদিনের জন্য স্কুল খুলেছিল বটে৷ কিন্তু ভাইরাসের প্রকোপ মাথাচাড়া দিতেই ফের বন্ধ হয় স্কুলের দরজা।

এই দুই বছরে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে পড়ুয়াদের স্কুল জীবন৷ স্কুলের পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশুনোর একই হাল। ভেঙে পড়েছে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য৷ এই পরিস্থতিতে ইউনিসেফ জানাচ্ছে, অবিলম্বে স্কুল খুলে দেওয়া উচিত। নাহলে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে৷ ইউনিসেফের শিক্ষাবিদরা বলছেন,  দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় ৬১ কোটিরও বেশি ছাত্রছাত্রী ক্ষতির সম্মুখীন। ১০ শতাংশের বেশি শিশু লিখতে পড়তেই ভুলে গিয়েছে। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিশু কোনও ভাবেই আর স্কুলমুখী হতে চাইছে না। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সমাজের নীচু তলার মানুষরা৷ 

ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক প্রধান রবার্ট জেনকিন্সের কথায়, দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের পড়াশোনায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত৷ তবে শুধু স্কুল খুললেই সমস্যার সমাধান হবে না। যে গভীর ক্ষত হয়েছে, তা সারিয়ে তুলতে পড়ুয়াদের উপর বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷ সেই দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদের। পাশাপাশি শিশুদের শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। দুই বছরে যে ঘাটতি হয়েছে, তা পূরণের জন্য নতুন ও কার্যকরী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, পড়ুয়াদের কতখানি ক্ষতি হয়েছে তা ভবিষ্যতই বলবে। এই মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেলেই সবথেকে বেশি উপকৃত হবে পড়ুয়ারা। আগামী কয়েক বছর এভাবেই করোনাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করেই খুলে দিতে হবে স্কুল৷ নাহলে সংক্রমণ আরও বাড়বে৷ কিন্তু এর জন্য কোনও ভাবেই শিশুদের শৈশব ও ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।