সদ্য মাত্রই কেন্দ্র সরকারের তরফে ঘোষিত হয়েছে নতুন প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘোষণা হওয়ার পরেই দেশজুড়ে মারাত্মক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ভারতের সশস্ত্র তিন বাহিনীতে নিয়োগের নতুন মডেল অগ্নিপথকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে কার্যত উত্তাল গোটা দেশ। এই মডেলকে ভুল এবং অসত্য দাবি করে ইতিমধ্যেই বাংলা, বিহার, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানাসহ একাধিক রাজ্যে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ প্রদর্শন। রাস্তা, ট্রেন লাইন অবরোধ থেকে শুরু করে, পাথর ছোঁড়া, এমনকি বাস-ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও এই মুহূর্তে দেশের একাধিক রাজ্যে ঘটেছে।
এমতাবস্থায় রবিবার দেশের তিন সেনাপ্রধানের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। বৈঠকের পরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল পুরি একটি জরুরী বৈঠক করেন আর সেই বৈঠকেই সেনার তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল যে কোনো অবস্থাতেই অগ্নিপথ প্রকল্প থেকে পিছু হটবে না কেন্দ্র। এই প্রকল্পে নিয়োগ হবেই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ ডিপার্টমেন্ট অফ মিলিটারি অ্যাফেয়ার্সের লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল পুরীর কথায়, ‘এই সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এই সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীতে তারুণ্যতে জোর দিয়েই এই প্রকল্প। ১৯৮৯ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সংস্কারের পদক্ষেপ হিসেবেই CDS-এর নিয়োগ করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত।’
অন্যদিকে প্রায় একই রকম বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। এদিন তিনি সাফ জানান যে, কেন্দ্রের বেশকিছু প্রকল্পকে রাজনীতির রঙে রাঙিয়ে তা বাস্তবায়িত করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োগ হবেই। দিল্লির প্রগতি ময়দানে ট্রানজিট করিডরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে এদিন মোদী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘এটা আমাদের দেশের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক যে, ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে, ভাল কিছু করতে উদ্যোগী হলেও তাতে রাজনীতির রং লেগে যায়।’ এর সঙ্গেই কেন্দ্র যে এই প্রক্লপ নিয়ে বদ্ধপরিকর তা বোঝাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নতুন ভারত। এই ভারত সমস্যার সমাধান করতে পারে, নতুন অঙ্গীকার করতে জানে। আর সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করতে সব রকম ভাবে উদ্যোগী হয়।’
অন্যদিকে এই প্রকল্পে তরুণ সমাজের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে এদিন সেনাবাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সেনাবাহিনীতে আরও বেশি করে যুব সম্প্রদায়কে প্রয়োজন। আগামীদিনে টেকনোলজি নির্ভর যুদ্ধ হবে। তার জন্য আজকের জেনারেশনকে প্রয়োজন, যারা মোবাইল-কমপিউটার নিয়েই বড় হয়েছে। যুব সমাজ সার্বিকভাবেই প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে।’ এর সঙ্গেই এই প্রকল্প আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, ‘একজন অগ্নিবীর এবং আমার মধ্যে কিংবা একজন জওয়ানের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। নিয়োগের পর চার বছরের মধ্যে কোনও অগ্নিবীর শহিদ হলে তাঁর পরিবার ১ কোটি টাকা পাবেন।’ তবে এর সঙ্গেই সেনার তরফ থেকে এদিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পে নিয়োগের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল পুলিসি যাচাই। সেক্ষেত্রে যারা এই প্রকল্প নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা কোনোভাবেই এই নিয়োগে সামিল হতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে।