নিজস্ব কোষাগার থেকেই বাংলার বাড়ি প্রকল্পে টাকা দিতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী

‘আবাস যোজনা’প্রকল্পে গত বছরের শেষ থেকে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গরিব মানুষের মাথার ওপর ছাদ তৈরি করে দিতে নিজস্ব কোষাগার থেকেই বাংলার বাড়ি প্রকল্পে টাকা দিতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রকল্পের টাকা দেওয়ার সময় থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ ছিল যদি কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি তৈরি করে দিতে চান তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যেন থানায় গিয়ে উপভোক্তারা এফআইআর করে আসেন। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিই সার! তাই তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করেই বাংলার বাড়ি প্রকল্প থেকে ইতিমধ্যেই উঠে আসছে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ। জানা যাচ্ছে এই কাটমানি নিয়েছেন এক শ্রেণীর লোভী তৃণমূল নেতা। তাঁদের  বিরুদ্ধে থানায় এফ আই আর এর সংখ্যাও দাঁড়িয়েছে বিপুল পরিমাণ। এই কাটমানি খাওয়া ঠেকাতে শুরুতেই কড়া হুশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ যেন কাটমানি না খেতে পারে। জেলা প্রশাসনকে সেটা দেখতে হবে।’

 তারপরেও সমস্ত নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে সেই একই কাণ্ড ঘটল আবার। আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ থাকার পরেও বাংলার বাড়ি প্রকল্পে কাটমানি আদায়ের নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। মূলত এই অভিযোগগুলি আসছে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা থেকে। যা নিয়ে এখন থেকেই শুরু হয়েছে ব্যাপক চর্চা। জানা যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত মোট ৫০ টি এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কর্তারা থাকা সত্ত্বেও এমন বেআইনি কাজ হচ্ছে কি করে? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এক জেলার পুলিশকর্তা এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন সংখ্যাটা নাকি আরও বাড়তে পারে। ইতিমধ্যেই প্রত্যেকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর  কড়া নির্দেশ। তাই যত বড় নেতাই হোক না কেন কাউকে রেয়াত করা হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারী প্রকল্প আবাস যোজনায় আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে টাকা পেতেন বাংলার মানুষ। কিন্তু বিগত দুবছর ধরে এই প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। অভিযোগ এই প্রকল্পের টাকা নিয়ে কারচুপি করেছেন রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। এই কারণেই নাকি কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

অন্যদিকে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ এনে একাধিকবার সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকেই মোট ১২ লক্ষ উপভোক্তাদের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা দেওয়া শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। যেখানে গরিব মানুষদের মাথার ওপর ছাদ তৈরি করার করার টাকা দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের নিজস্ব কোষাগার থেকে সেই টাকা নিয়েও এবার কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এমনটা যে ঘটতে পারে সে কথা আগেই আঁচ করে ফেলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এই প্রকল্পের দায়িত্ব পঞ্চায়েত দপ্তরের হাতে থাকলেও এদিকে শুরু থেকেই সজাগ দৃষ্টি রেখেছে নবান্ন। এমনকি প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর আগে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে পরীক্ষা করা হয়েছে বারবার। সম্প্রতি রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর থেকে এই কাটমানি খায়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে শাহনাজ আলম নামে দক্ষিণ মানকুন্ডার এক ব্যক্তিকে।  এই শাহনাজের আত্মীয় হলেন আজমিরা খাতুন মানকুন্ডা এক গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যা।