আন্দোলনের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, জারি কারফিউ

আন্দোলনের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তার পদত্যাগের ফলে নতুন মন্ত্রিসভাও ভেঙে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি পদত্যাগ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক চান্না জয়সুমানা। আজ সোমবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় সরকারবিরোধীদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিক্ষোভস্থলে শাসক দলের সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটে। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর আসে। হামলার আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে শাসকদলের একদল সমর্থক জড়ো হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। এরপর প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। এই বৈঠক শেষ করে মিছিল করে গিয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরের সামনে অবস্থানরত সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় তারা। সরকার সমর্থকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠি ও লোহার পাইপ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হামলাকারীদের সেখান থেকে সরাতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। শাসক দলের সমর্থকদের এ হামলার ঘটনার পর দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। কলম্বোয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের এ সহিংসতায় অন্তত ৭৮ জন আহত হয়েছে।

মূলত, গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গোতাবায়ে রাজাপাকসে তার ভাই মাহিন্দাকে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের উদ্দেশে পদত্যাগের আহ্বান জানান। তখন গোতাবায়ের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলা হয়েছিল, দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতার কারণে মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগে রাজি হয়েছেন। এর আগে এক প্রতিক্রিয়ায় মাহিন্দা রাজাপক্ষে বলেছেন, চলমান সংকট নিরসনে একমাত্র সমাধান যদি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা হয়, তবে তিনি পদত্যাগে রাজি আছেন।

উল্লেখ্য, গত মাসের শুরুতে শ্রীলঙ্কার ২৬ মন্ত্রী একযোগে পদত্যাগ করেন। এরপর নতুন সরকার গঠনে সহযোগিতা করার জন্য বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান গোতাবায়া। কিন্তু তার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিল বিরোধী দলগুলো। কিন্তু পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানান প্রেসিডেন্ট। পরে ওই মাসের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ১৭ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিপরিষদ নিয়োগ দেন। আর মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নিয়োগ করেন। রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে জোরালো বিক্ষোভ চলার মধ্যেই নতুন মন্ত্রিসভা নিয়োগ করা হয়। এদিকে, গত মাসের শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধীদের দাবি, রাজাপক্ষে জনগণের আস্থা হারিয়েছেন। ওই সময় তা বারবার নাকচ করে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। এরপর নতুন মন্ত্রিপরিষদ নিয়োগ দিয়ে রাজাপক্ষে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে বিক্ষোভকারীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করবেন না তিনি। কিন্তু দেশটিতে আন্দোলন তীব্র হওয়ায় অবশেষে মাহিন্দাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে বলে খবর।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে চলমান বিক্ষোভ দমাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। দেশব্যাপী ধর্মঘট ও ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এ জরুরি অবস্থা জারি করেন। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী করে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে বেশ কিছুদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে।

শ্রীলঙ্কায় পর্যটক কমে যাওয়ার কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে। তিনি স্বীকার করেছেন যে তীব্র প্রতিবাদের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটকদের অনুপস্থিতির ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াও বিদ্যমান অর্থনৈতিক দুর্দশার ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কার সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট কাটাতে ঋণের জন্য আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দাতাদেশগুলোর শরণাপন্ন হচ্ছে। এরই মধ্যে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির ইতিহাসে এটি প্রথম ঘটনা।