বিগত বেশ কিছুদিন ধরে রাজনীতির মঞ্চে শুরু হয়েছে এক জল্পনার৷ এই পরিস্থিতির মাঝেই এই জল্পনাকে উস্কে দিয়ে গোটা দক্ষিণ কলকাতা ঢাকা পড়ল রহস্যময় হোর্ডিংয়ে৷ তাতে লেখা ‘আসছে নতুন তৃণমূল’!
শুধু তাই নয়, ওই পোস্টারে কেবল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি৷ দেখা গেল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ৷ এর পিছনে রহস্যটা কী? কুণাল ঘোষের জবাব, রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি ব্যবহার করলে কি নজরুলের ছবি দেওয়া যাবে?
ভবানীপুর, কালীঘাট, হাজরা, রাসবিহারী মোড় জুড়ে ছয়লাপ অভিষেকের পোস্টারে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির উল্টোদিকেও পড়েছে একটি বড় পোস্টার। দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল যখন কোণঠাসা, তখন এই পোস্টার নিশ্চিত ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ৷
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআই হেফাজতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও এক ঘনিষ্ঠ অনুব্রত মণ্ডল৷ ক্রমাগত আক্রমণ শানাচ্ছে বিরোধীরা৷ এই প্রেক্ষাপটে নিজেদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে নানা রণকৌশল নিচ্ছে শাসক দল৷ বারবার বিবৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে, দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ নয়৷ নেওয়া হচ্ছে একাধিক কর্মসূচিও৷
তারই মাঝে নতুন হোর্ডিং নিশ্চিত ভাবে অর্থবহ৷ যেখানে লেখা রয়েছে, ‘আগামী ছ’মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল। ঠিক যেমন সাধারণ মানুষ চায়।’ অপর একটি পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘চলুন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন। এই লড়াই আমাদের ২৪ এর লড়াই।’
কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উল্টোদিকে যে পোস্টারটি লাগানো হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে, ‘মানুষ যেভাবে চায়, সেভাবেই তৈরি হচ্ছে তৃণমূল’। হোর্ডিংয়ে রয়েছে শুধুমাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। সঙ্গে লেখা ‘নতুন তৃণমূল’ এই শব্দবন্ধ।
একদা বামফ্রন্ট আমলে বলা হত, ‘বামফ্রন্টের বিকল্প- উন্নততর বামফ্রন্ট’৷ খানিকটা সেই মতোই তৃণমূল জমানায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া হোর্ডিংয়ে লেখা হল-‘নতুন তৃণমূল’! যা নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিভেদের জল্পনা উস্কে দিয়েছেন বিরোধীরা।
এ প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, গ্রামে পোস্টার পড়ে, যাত্রা-পার্টি আসছে, অভিষেক আসছে। নতুন বোতলে পুরনো মদ। তৃণমূলের নীতির কোনও পরিবর্তন হতে পারে না৷ এটা লুঠেরার পার্টি। শুধু দেখার পিসির কন্ট্রোল বেশি হবে, না ভাইপোর?
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, অভিষেক বারবার বলেছেন উন্নততর তৃণমূল চাই। তাঁর বক্তব্য মাথায় রেখেই হয়তো কোনও উৎসাহী তৃণমূলকর্মী এই পোস্টার দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি ব্যবহার করলে কি নজরুলের ছবি দেওয়া যাবে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের তৃতীয়বার জয়ের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন ফেসবুক পোস্টে তেমনটাই বসেছিলেন কুণাল ঘোষ। তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিস্তর জলঘোলাও হয়েছিল। এবার সেই জল্পনা নতুন করে উস্কে দিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ‘নতুন তৃণমূল’-এর পোস্টার৷