রাজ্যে জুড়ে তোলপাড় পরিস্থিতি। গরুপাচার কাণ্ডে জর্জরিত অনুব্রত মণ্ডল৷ চলছে জেরার পর জেরা৷ নতুন প্রশ্নমালা সাজিয়ে ফের অনুব্রত মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু সিবিআই-এর৷ তাঁর কাছে একাধিক প্রশ্নের জবাব খুঁজছে সিবিআই৷
এদিকে জানা গিয়েছে, পাচার হওয়া গরু প্রতি আড়াই হাজার টাকার লেনদেন চলত৷ বিএসএফ নিত গরু প্রতি ২০০০ টাকা, কাস্টমস নিত গরু প্রতি ৫০০ টাকা৷ বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারের আমলে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২০ হাজার গরু পাচার হয়েছিল বাংলাদেশে৷
মালদা ও মুর্শিদাবাদ সীমান্ত দিয়ে এই গরু পাচার করা হত৷ বীরভূমকে ব্যবহার করা হত সেফ করিডর হিসাবে৷ সিবিআই চার্জশিটে সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ আর গরু পাচারের টাকার ভাগ যেত প্রভাবশালীদের কাছে৷ চলত নগদ টাকায় লেনদেন৷
কাদের কাদের কাছে পৌঁছত ভাগের টাকা? অনুব্রতকে প্রশ্ন সিবিআই-এর৷ ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বৃদ্ধি পায় অনুব্রতর৷ স্ত্রী ও মেয়ের নামে চালকল, জমি সহ কেনা হয়েছে একাধিক সম্পত্তি৷ কী কী ব্যবসা রয়েছে অনুব্রতর? তাঁর নামে কী কী কোম্পানি রয়েছে? তাঁর আয়ের উৎস জানতে চাইছে সিবিআই৷
অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা৷ প্রথমে অনুব্রতর লিখিত বিবৃতি নেওয়া হয়৷ এর পর গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার বিএসএফ-এর প্রাক্তন কমান্ডান্ট সতীশ কুমার, মূল পাণ্ডা এনামুল হক, বিকাশ মিশ্র এবং সর্বশেষ অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের লিখিত বয়ানে যেখানে যেখানে অনুব্রতর নাম উঠে এসেছে, সেই সেই বিষয় নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷
সতীশ কুমার সিবিআই আধিকারিকদের জানিয়েছিলেন, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তাঁর পোস্টিং ছিল ৩৬ নম্বর ব্যটেলিয়নে৷ মালদা ও মুর্শিদাবাদ সীমান্ত তাঁর অধীনে ছিল৷ এই সময়কালে ২০ হাজারেরও বেশি গরু পাচার করা হয়েছিল৷ এই পাচার প্রক্রিয়ায় মালদা ও মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি সেফ করডর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে বীরভূমকে৷
এর জন্য প্রভাবশালী নেতাদের কাছে পৌঁছত মোটা অঙ্কের টাকা৷ লেনদেন হত নগদে৷ বিভিন্ন রাজ্য থেকে গরু আসত বীরভূমের ইলামবাজারে গরুর হাটে৷ যে হাটের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল অনুব্রতর৷ এই হাট থেকেই ট্রাকে করে গরু পাচার করা হত বাংলাদেশে৷ সিবিআই-এর হাতে এই তথ্য উঠে এসেছে৷ সেই নিরিখেই অনুব্রত মণ্ডলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই টাকা তাঁর হয়ে কে নিতেন? এবং তা কোথায় কোথায় যেত?
২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরু পাচার হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর৷ এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বীরভূমে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের৷ দেখা গিয়েছে, এক মাস কিংবা ১৫ দিনের ব্যবধানে জমি, চটকল কিনেছেন অনুব্রত৷ তাঁর আয়ের উৎস কী ছিল, তা জানতে মরিয়া সিবিআই৷
ইতিমধ্যে গরু পাচার মামলায় যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের কল ডিটেইলস খতিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রত্যেকের সঙ্গেই কথা হত অনুব্রতর৷ কোন পরিপ্রেক্ষিতে গরু পাচার চক্রের কিংপিং এনামুলের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের কী কী কথা গত, তা জানতে চাওয়া হয়েছে তাঁর কাছে৷
সিবিআই সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত সে ভাবে তদন্তে সহযোগিতা করছেন না অনুব্রত৷ বেশিরভাগ প্রশ্নই তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন কিংবা নিশ্চুপ থাকছেন৷ ইতিমধ্যে নিজাম প্যালেসে পৌঁছছেন তাঁর আইনজীবীরা৷ তাঁদের সঙ্গে ৩০ মিনিট কথা বলার সময় দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতাকে৷