এবারের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসে বিপুল ক্ষমতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ফিরে এলেও কোচবিহারে মোটেই ভালো ফলাফল করতে পারেনি তারা। নয়টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র দুইটিতে জয়ের মুখ দেখতে পেরেছে। এই জেলায় বিজেপির এই সাফল্যের পিছনে যতটা না তাদের সাংগঠনিক জোর, তাঁর চেয়ে বেশী তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলকে দায়ী করেছে রাজনৈতিক মহল। ভোটের ফলেও হুঁশ ফেরেনি নেতৃত্বের। তাই এখনো পুরোনো ছন্দে আসতে পারেনি তৃণমূল।
অনেকেই খারাপ ফলের জন্য জেলা সভাপতিকে দায়ী করে তাঁর পরিবর্তন দাবি করছেন। শীঘ্রই একাধিক জেলায় নেতৃত্বে পরিবর্তন আনবে তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার পাশাপাশি কোচবিহারেও জেলা সভাপতি পরিবর্তন হতে পারে বলে কানাঘুষো চলছে। আর ঠিক সেই মহূর্তে গোষ্ঠীকোন্দল ভুলে দুই বিরুদ্ধ গোষ্ঠী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও পার্থপ্রতিম রায়ের এক হয়ে দলকে শক্তিশালী করার জন্য ডাক দিলেন দলের সাধারণ কর্মীরা।
সবাই জানেন বর্তমান কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পার্থপ্রতীম রায় প্রাক্তন জেলা সভাপতি ও মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের শিষ্য হিসেবেই মূল রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নাটাবাড়ির জিরানপুর থেকে প্রায় তুলে এনে পার্থবাবুকে নেতৃত্বের আসনে বসান রবিবাবু। তাঁর হাত ধরেই উপ-নির্বাচনে কোচবিহারের সাংসদ হন পার্থপ্রতীম রায়। এরপরেই দুই জনের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়। একদা শিষ্য রাজনৈতিক গোষ্ঠীকোন্দলে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে রবিবাবুর। এই জন্যে একাধিকবার ঘনিষ্ঠ মহলে খেদ প্রকাশ করেছেন রবিবাবু। পার্থবাবুকে নেতৃত্বের উপরের সারিতে দ্রুত তুলে আনাকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত বলে আক্ষেপ করেছেন একাধিকবার।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বিধায়ক থেকে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন। টানা ২২ বছর জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। রবিবাবুর এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বর্তমানে তৃণমূলের জন্য জেলার সংগঠনের জন্য খুবই জরুরী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। নিজের হাতে কোচবিহারে গড়ে তোলা দলীয় সংগঠনকে ফের খাদের কিনারা থেকে তুলে দাঁড় করাতে রবিবাবুর মত বলিষ্ঠ নেতারই নাকি এই মুহূর্তে প্রয়োজন। জেলার প্রতিটি বুথে কর্মীরা তাঁরই পরিচিত। আর জেলা জুড়ে এই পরিচিতি দলের অন্য কোনো নেতার নেই। তাই রবিবাবু জেলার সংগঠনের রাশ ধরলে অনেকটা অক্সিজেন পাবে তৃণমূল। সেই কাজও নাকি ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ সময় দলীয় পদ ও ক্ষমতায় থাকার কারনে রবিবাবুর বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া তৈরী হয়েছিল তাও এই এক বছরে অনেকটা ম্রিয়মাণ।
আর পার্থবাবু যতই রবি ঘোষের থেকে দূরে সরে যান, এক সময়ের রাজনৈতিক গুরু সম্পর্কে তিনি নাকি এখনও আবেগপ্রবণ। তাই প্রকাশ্যে কখনই রবিবাবুর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কটূ শব্দ ব্যবহার করেননি তিনি। এইসময়ে তিনি দলীয় স্বার্থে ফের রবির নেতৃত্ব মেনে নিলে দলীয় কোন্দল অনেকটাই হ্রাস পাবে বলে অনেকেই মনে করছেন সবাই। এতে প্রশস্ত হতে পারে পার্থর লোকসভায় ফিরে যাওয়ার পথও। তাই এই দুইয়ের ফল্গুধারাকে এক করে দলকে শক্তিশালী করার ডাক উঠছে। রবিবাবুকেও তাঁর পুরোনো শিষ্যকে ক্ষমাশীল ও পুত্রবৎ দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখার কথা উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দলীয় কর্মীরা। সবাই জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ফোনেই এই সমস্যা সমাধান হতে পারে। দেশের রাজধানী দিল্লী থেকে সম্প্রতি ফিরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়। শীঘ্রই দলের খোলনচল বদলাতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে কোচবিহারে নেতাদের মনোমালিন্য রোধে তিনি কি ভুমিকা নেন তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দল।