বামজামানায় কোচবিহারে শূন্য থেকে শুরু করে একসময় বিধায়ক সংখ্যা নয়ের মধ্যে আটে এসে দাঁড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের। আর সেই অপ্রতিরোধ্য তৃণমূলের বিজয় রথ আটকে যায় বিগত ২০১৯ লোকসভায়। বিজেপির কাছে কোচবিহার লোকসভা আসনে পরাজিত হয় তৎকালীন জেলা সভাপতি সমর্থিত তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। আর এরপরেই দলের জন্মলগ্ন থেকে দায়িত্বে থাকা জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মনের হাত ঘুরে জেলা সভাপতির দায়িত্ব বর্তমানে তুলনায় তরুণ ও নবীন নেতৃত্ব পার্থ প্রতীম রায়ের হাতে। তা সত্বেও বিগত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে শাসকদল ভালো ফল করলেও করতে পারেনি কোচবিহারে। বিধায়ক সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে সাকুল্যে দুইয়ে। দলের এই হতাশাব্যঞ্জক ফলে নাকি ক্ষুদ্ধ রাজ্য নেতৃত্ব। রাজনৈতিকমহলে ফের কোচবিহারের জেলা সভাপতি পরিবর্তনের ডাক শোনা যাচ্ছে।
এদিকে কোচবিহারে খারাপ ফলাফলের জন্য সাধারণ কর্মীরা হতাশায় ভুগছেন ঠিক তখনই হতাশাকে পাশে সরিয়ে রেখে কর্মীদের উজ্জ্বীবিত করতে ময়দানে কোমর বেঁধে নেমেছেন সেই প্রাক্তন জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পুরোনো কর্মীদের ফের সংগঠিত করতে এলাকায় এলাকায় যাচ্ছেন তিনি। কোথাও ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় আবার কোথাও পুরোনো নেতৃত্বের স্বরণসভায় দেখা যাচ্ছে তাঁকে। রবিবাবুর আন্তরিক ডাকে ফের সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে পুরোনো কর্মীদের।
১৯৯৮ সালে ১ জানুয়ারী তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠালগ্নে গুটি কয়েক কর্মী সমর্থক নিয়ে দল শুরু হয় কোচবিহারে। তখন কোচবিহারে নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন রবি। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে কর্মীসংখ্যা। কিন্তু দলের শ্রীবৃদ্ধি হওয়াতে সেই পুরোনো কর্মীরা অনেকেই মুলস্রোত থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। আসলে তৃনমূলের সংগঠনের কলবর বেড়েছে বাম, কংগ্রেস থেকে আসা নেতা কর্মীদের জোয়ারে। আর ভিন দল থেকে এসে পুরোনো কর্মীদের উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তাঁদের অনেকেই। অনেকেই বামদল থেকে এসে তৃণমূলের প্রতীকে বিধায়ক এমনকি মন্ত্রীও হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এক সময়ের প্রতিপক্ষ সেইসব নেতাদের ঘোষিত শত্রু হিসেবে চিহ্নিত পুরোনো সক্রিয় কর্মীরা অতএব একসময় কোণঠাসা হয়ে পরেন। আর ক্রমশঃ মুলস্রোত থেকে হারিয়ে যান। তৃণমূল স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অগাধ আনুগত্যশীল পোড়খাওয়া সেইসব কর্মীরা বসে যাওয়াতে নাকি কোচবিহারে বিজেপির উত্থান সুবিধা হয়েছে।
কেননা বাম কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা নেতাদের অনেক ক্ষেত্রেই ভালোভাবে নেয়নি সাধারন মানুষ। তাই সেভাবে সংগঠন না থাকা সত্ত্বেও বিজেপি প্রচারে এগিয়ে থাকছে কোচবিহারে। লোকসভা ভোটের পরে রাজ্য নেতৃত্ব এই বিষয়টি বুঝতে পেরে পুরোনো কর্মীদের গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কোচবিহারে পোড়খাওয়া এবং ইতিহাস ভুগোল সেভাবে জানা কোনো নেতৃত্ব দায়িত্বে না থাকায় নাকি অনেক লড়াকু পুরোনো কর্মীদের সাথে সেভাবে সংযোগই করে উঠতে পারেনি দল। এমনকি সেই কারনে লোকসভায় শীতলকুচীর মত এগিয়ে থাকা আসনেও বিধানসভায় হারতে হয় খোদ জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে।
বিধানসভা নির্বাচনে হতাশাজনক ফলাফলের পরে দলীয় নির্দেশ ও লাইন মেনে ফের পুরোনো কর্মীদের সংঘবদ্ধ করতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সাময়িক হতাশা কাটিয়ে কোচবিহারের পুরোনো নেতৃত্ব ও সমর্থকদের সাথে জনসংযোগের জন্য একরকম আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন তৃণমূলের বিশ্বস্ত সৈনিক রবিবাবু। চড়কির মত ছুটছেন দিনহাটা থেকে তুফানগঞ্জ এবং বিবিধ জনপদ। বক্তব্যে বারবার তুলে ধরছেন সংগঠনের শুরুর দিনগুলির লড়াই সংগ্রামের কথা। সব জায়গায় পুরোনো কর্মীদের সাথে সরাসরি নাম ধরে ধরে যোগাযোগ সারছেন তিনি।
সম্প্রতি রবিবাবু দিনহাটায় ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন প্রাক্তন এক ব্লক সভাপতি তথা কোচবিহার জেলা পরিষদে একমাত্র বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী জেলা পরিষদ প্রার্থীর বাড়িতে। ডানপন্থী আন্দোলনের দাপুটে এক নেতার স্মরণসভাতেও হাজির ছিলেন তিনি। পুরোনো কর্মীদের সংঘবদ্ধভাবে বিজেপিকে রুখে দেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি মিটিং সেরেছেন অনন্ত মহারাজের সাথেও।
আর রবিবাবুর এই রণংদেহী মনোভাব দেখে উজ্জ্বীবিত হচ্ছেন মুলস্রোত থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাক্তন তুণমূল কর্মীদের পাশাপাশি আজকের সক্রিয় তৃণমূল কর্মীরাও। এরফলে ভোটব্যাংকে কতটা লাভবান হবে তৃণমুল কংগ্রেস, এখন সেটাই দেখার।