মোনালিসা ও কিছু অজানা তথ্য

বিখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এই রহস্যময় চিত্রটি আঁকেন। প্রায় চারবছর লেগেছিল তাঁর এই ছবিটি আঁকতে। ‘মোনালিসা’ ছবিটির মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৮৩০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু, মোনালিসার এই চিত্রটি এতো ব্যয়বহুল হওয়ার নেপথ্যে কারণ কী? এই রহস্যের সমাধান করা কিন্তু আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

অনেকের মতেই তার আঁকা বিখ্যাত এই চিত্র “মোনালিসা” ছিল ফ্লোরেন্সের তৎকালীন একজন সিল্ক ব্যবসায়ীর স্ত্রী লিসা গেরারদিনের পোর্ট্রেট। আবার অনেকেই মনে করেন লিওনার্দো তাঁর কল্পনা থেকেই এই ছবিটি এঁকেছিলেন। পূর্ণভাবে রহস্যে ঘেরা এই মোনালিসার চিত্রটি। ছবিটি বিভিন্ন দিক থেকে দেখলে বিভিন্ন রকম মনে হয়।

দূর থেকে চিত্রটি দেখলে মনে হয় সে হাসছে কিন্তু কাছে গিয়ে তার দিকে তাকালে মনে হয়, গভীরভাবে কিছু চিন্তা করছে। আবার চোখের দিকে তাকালে তাকে হাসি-খুশি মনে হলেও তার ঠোঁটের দিকে তাকালেই সে হাসি উধাও।

এই রহস্যের পেছনের আসল কারণ আজ পর্যন্তও কেউ বের করতে পারেননি। ছবিটি নিয়ে আজও মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।

২০০৪ সালে বিজ্ঞানী পাস্কাল মোনালিসার বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছবি তোলেন এবং তা বিশেষ আলো ও লেন্সের প্রযুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে জানান যে ছবিটিতে তিনটি আলাদা আলাদা ইমেজ রয়েছে। তৃতীয় যে ইমেজটি তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন সেটি ছিল অন্য এক নারীর মুখ, তবে তার ঠোটে কোনো হাসি ছিল না।

১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সালের মধ্যবর্তী কোনও একসময়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ছবিটি আঁকেন। তবে, ছবিটি সম্পূর্ণ না করেই লিওনার্দো মারা যান। অর্থাৎ আমরা মোনালিসার যেই ছবিটি দেখি সেটিতে আরো কিছু আঁকার বাকি ছিল।

মোনালিসার ছবিটি ফ্রান্সের লুভ মিউজিয়ামে রাখা হয়। তবে, ৩১ আগস্ট ১৯১১ সালে মিউজিয়াম থেকে ছবিটি চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া এই ছবিটি দুইবছর পর আবার উদ্ধার করে মিউজিয়ামে বুলেটপ্রুফ কাঁচের ভেতর সুরক্ষিত রাখা হয়। যাতে দ্বিতীয়বার এটি চুরি হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে।

এখন কথা বলব মোনালিসার ভ্রূ নিয়ে যা আমরা হয়তো কখনই খেয়াল করিনি, যে মোনালিসার কিন্তু ভ্রূ নেই। তবুও এটি দেখতে অনেক সুন্দর।

অনেকেই মনে করেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির রমণীয় প্রতিচ্ছবি হলো এই মোনালিসা। কারণ লিওনার্দো ও মোনালিসার ছবি পাশাপাশি রাখলে দেখা যায় যে তাদের চোখ, ঠোট, মুখ, চোয়াল অনেকটা একইরকম। এক ব্যক্তি কম্পিউটারে লিওনার্দো ও মোনালিসার ছবি পাশাপাশি রেখে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে দেখে এটিই অনুমান করেন যে লিওনার্দোর রমণীয় প্রতিচ্ছবিই হলো মোনালিসা। কারণ হিসেবে আরো জানান যে, কম্পিউটারের মাধ্যমে মোনালিসাকে দাড়ি ও ভ্রূ লাগিয়ে দেখার পর আপনার মনে হবে এটি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি।

ইতালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি ভিনসেতি বলছেন, মোনালিসার চোখে যখন হাই রেজুলেশন ক্যামেরা ধরা হয় তখন তার চোখে কিছু নাম্বার ও সংকেত দেখা যায়। হাই রেজুলেশন ক্যামেরাতে জুম করে দেখতে পাওয়া যায় তার ডান চোখের মণিতে “এল”, “ভি” বর্ণ দু’টি লেখা রয়েছে; যা লেওনার্দোর নামের আদ্যক্ষর। আর বাঁ চোখে রয়েছে “বি” অথবা “এস” বর্ণ বা “সি”, “ই” বর্ণদ্বয় । এই দু’টি বর্ণও কোনো অর্থ বহন করে এবং সম্ভবত তা এই চিত্রকর্মটির মডেলের পরিচয় বহন করছে ।

মোনালিসার ছবির বাঁপাশ থেকে আলট্রা ভায়োলেট পদ্ধতি ব্যাবহার করে ভিঞ্চির লেখা একটি বার্তা উদ্ধার করা হয়। বার্তাটি ছিল “লারিস্পোস্তা শ্রী তোভাকি”- যার অর্থ “উত্তরটা এখানেই আছে”!.

                …… সন্দীপ তালুকদার