শুধু পুজো নয়, সম্প্রীতির বড় উদাহরন বয়ে চলছে চাঁচোল

চাঁচোল রাজবাড়ির দুর্গা প্রতিমার বিসর্জনের দিন সন্ধ্যাবেলায় পুকুর পাড়ে লন্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই সম্প্রদায়ের পুরুষ- মহিলাদের লন্ঠনের আলোয় গোটাপুকুর আলোকিত না হচ্ছে, ততক্ষণ দেবী দুর্গা বিসর্জিত হবে না বলে নিয়ম প্রচলিত রয়েছে এই পুজোয়। প্রায় ৩৫০ বছর ধরে সম্প্রীতির এই পরম্পরা মেনে আজও চাঁচোল রাজবাড়ির দেবী দুর্গা নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর পর বিসর্জন পর্ব এখনও পালিত হয়ে আসছে এখানে।

জানা যায়, দশমীর দিন সন্ধ্যায় বিসর্জনের সময় শুধুমাত্র লন্ঠনের আলো নিয়ে দেবী দুর্গাকে পথ দেখান মুসলিম সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলারা। চাঁচোল মহকুমার পাহাড়পুর এলাকার মহানন্দা নদীর পশ্চিমপাড়ে সতীঘাট নামে পরিচিত ওই জলাশয়ে নিয়ম করে দেবীদুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। একদিকে যখন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকেন, ঠিক অপরপ্রান্তে সমস্ত পুকুর ঘিরে লণ্ঠনের আলোয় আলোকিত করে তোলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। চাঁচোল রাজবাড়ির দুর্গার বিসর্জনের প্রাচীন এই ঐতিহ্য দেখতে আজও কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেন পাহাড়পুর এলাকার পুকুর পাড়ে।

উল্লেখ্য, প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো চাঁচোলের রাজবাড়ির অষ্টধাতু নির্মিত চন্ড্রিরূপী মূর্তি দেবী দুর্গার রূপে পূজিত হন।  এর সঙ্গে বিকল্প হিসাবে দেবী দুর্গার একটি মাটির মূর্তিও তৈরি করা হয়। একসময় চাঁচোলে রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরী স্বপ্নাদেশে চন্ডী মূর্তির মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে রামচন্দ্র রায়চৌধুরীর ছেলে শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরী সেই পুজোর দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে চাঁচোল রাজার শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরী নিঃসন্তান হওয়ায়, তাঁর মৃত্যুর পর চাঁচোল ট্রাস্টবোর্ড গঠন করে শুরু করা হয় চাঁচোল রাজবাড়ির পুজো। বর্তমানে চাঁচোল রাজবাড়ির পুজোর সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও জড়িত হয়ে পড়েছেন।