চলচ্চিত্র “অর্ধাঙ্গিনী”,একটি বিশেষ প্রতিবেদন

——–“অর্ধাঙ্গিনী”——-

শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত (নিয়োগী)

“অর্ধাঙ্গিনী” যার আক্ষরিক অর্থ –অর্ধেক অঙ্গের অধিকারিনী অর্থাৎ স্ত্রী ৷ প্রতি মুহূর্তে একজন স্ত্রী কীভাবে স্বামীর যথার্থ অর্ধাঙ্গিনী হয়ে ওঠে ,গুছিয়ে রাখে স্বামীর জীবনটাকে —
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে –দূরে বা কাছে থেকে–বর্তমান বা প্রাক্তন হয়েও ,তা রূপোলী পর্দায় পরতে পরতে বুঝিয়ে দিল সুরিন্দর ফিল্মসের প্রযোজনায় ,কৌশিক গাঙ্গুলী পরিচালিত ছবি “অর্ধাঙ্গিনী”৷
স্বামীর ভালোবাসায় স্বার্থ মিশে আছে জেনেও –তার মিথ্যাচারীতাকে আড়াল করে ,বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব কাঁধে নীরবে তুলে নিয়ে ,স্ত্রী প্রমাণ করে –শুধু অর্ধ অঙ্গ নয় স্বামীর জন্মজন্মান্তরের ভালোমন্দের বৈতরনী পার করতেই নারীজনম তার ৷ তাই তো স্বামীর অক্ষমতার বিষয়টি চেপে রেখে , সন্তানধারনের অক্ষমতার মিথ্যে অপবাদটুকু নিজের মাথায় নিয়েও যেন শান্তি তার ৷ পৌরুষত্বের বড়াই করা মানুষটাকে আইনী সম্পর্কের বাঁধন থেকে মুক্ত করে ,একলা জীবনপথে চলতেও পিছিয়ে পড়েনা অর্ধাঙ্গিনী ৷
পাশাপাশি রয়েছে আর এক অর্ধাঙ্গিনীর গল্প৷ সদ্য স্বামীহারা, সন্তানসম্ভবা ,ভিনধর্মী মহিলার প্রতি পুরুষের মন আটকে যাওয়া , তাকে দ্বিতীয় স্ত্রীরূপে গ্রহণ করা –শুধু কী ভালোবাসার তাগিদে !!অনাগত সন্তানকে পিতৃপরিচয় দেবার উদারতায় ! না কি নিজের বায়োলজিক্যাল বাবা হওয়ার অক্ষমতাকে ঢেকে সমাজে মিথ্যা অহংকারের লোভে !!সেকথা নিরীহ দ্বিতীয় পক্ষ না বুঝলেও প্রথমা ঊপলব্ধি করে মর্মে মর্মে ৷ মেডিক্যাল টেস্টে প্রাক্তন স্বামীর অক্ষমতার রিপোর্ট চেপে রেখে কীভাবে প্রাক্তনের সংসার গুছিয়ে দিতে হয় ,সমাজে বিশেষত শ্বশুরবাড়িতে তাদেরকে গ্রহণযোগ্য করে দিতে হয় তা যেন কেবলমাত্র পারে একজন অর্ধাঙ্গিনীই ,প্রাক্তন হয়েও ৷মধ্যযুগের বেহুলার মতো স্বামীর জীবন ফেরানোর চেষ্টায় মরিয়া প্রথমা ও বর্তমান৷ কখন যেন এই দুইয়ের নিজেদের দ্বন্দ্ব মুছে যায় অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার আবেগ আর কর্তব্যের ছোঁয়ায়৷
এই দুই অর্ধাঙ্গিনীর চরিত্রে পেলাম
চূর্নী গাঙ্গুলী এবং জয়া এহসানকে৷ চূর্নী গাঙ্গুলী বরাবরই একজন দক্ষ অভিনেত্রী ৷ যে কোনো চরিত্রের সঠিক রূপদানে সিদ্ধহস্ত তিনি ৷তাই ‘শুভ্রা’ চরিত্রের এতগুলো শেড ,নানান অভিব্যক্তি একটা ক্য৷নভাসে অনায়াসে নিপুণ,নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলে তিনি যেন সমাজের সব শুভ্রার সাথে নিজেকে মিলিয়ে দিলেন৷প্রতিটা মুহূর্তকে জীবন্ত করে বাস্তবের মাটিতে এনে দাঁড় করালেন তিনি ৷ পাশাপাশি জয়া এহসানও সমান দক্ষতায় বহন করলেন মেঘনা চরিত্রটিকে ৷ দুই অর্ধাঙ্গিনীর অভিনয় কোন কল্পলোকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল মনটাকে ,যেখানে শুধু বাস আমাদের ….”অর্ধাঙ্গিনী”দের৷
এই দুই অভিনেত্রীর সাথে সুমনের চরিত্রে যোগ্য ভূমিকা পালন করলেন কৌশিক সেন ,যার অভিনয় দক্ষতার কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ অম্বরীশ ভট্টাচার্য সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিতে শুভ্রা ও মেঘনার মাঝে সেতুবন্ধন তৈরী করলেন এবং অনায়াসে দর্শকের মন জয় করে নিলেন৷ প্রবীণা লিলি চক্রবর্তী বরাবরের মতো এখানেও নিজের কাজের মুন্সিয়ানা দেখালেন ৷সাথে পেলাম রায়া ভট্টাচার্য এবং অন্যান্য কিছু কুশীলবের যথাযথ অভিনয়৷ তাই মনের গভীরে জায়গা করে নিল ছবিটি৷
সর্বোপরি পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলী রঙ তুলি দিয়ে পর্দায় এঁকে দিলেন বিবাহিতা নারীর মর্মগাঁথা৷ বুঝিয়ে দিলেন বিচ্ছেদের পরেই হোক অথবা স্বল্পদিনের বিবাহিত জীবনেই হোক একজন স্ত্রী শুধু স্বামীর অর্ধ অঙ্গেরই অধিকারী নয়৷ স্বামীর হৃদয় ,জীবন বা জন্মান্তর –সবকিছুর চাবিকাঠি যত্নে বেঁধে রাখে “অর্ধাঙ্গিনী”—তার ভালোবাসার ডোরে ৷