যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এক কোটির বেশি মানুষ বাড়ি ছাড়া

অবিরাম গতিতে চলছে যুদ্ধ৷ রাশিয়ার সেনা অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গোটা ইউক্রেন৷ পুতিন বাহিনীর লাগাতার গোলাবর্ষণে জ্বলছে আগুন৷ বিশ্ব নেতারা যুদ্ধ নিয়ে বড় বড় ভাষণ দিয়ে চলেছেন৷ কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে৷ সেই কথারই প্রমাণ মিলল রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যানে। রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী সংক্রান্ত হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি জানিয়েছে, গত সাড়ে তিন সপ্তাহে ভিটে মাটি ফেলে ইউক্রেন ছেড়েছেন ১ কোটি  মানুষ৷ তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন পড়শি দেশে৷ আবার পুতিন বাহিনীর হামলার মুখে বেঘোরে মরতে হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে৷ রেহাই পায়নি শিশুরাও৷ 

গ্রান্ডির কথায়, “নিরপরাধ নাগরিকদের নিজেদের ভিটে-মাটি ছেড়ে পড়শি দেশে আশ্রয় নিতে হয়েছে৷ তাঁদের এই দুর্ভোগের দায় নিতে হবে যদ্ধকামীদেরই। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে যে, সে দেশের ১ কোটি মানুষ ঘরছাড়া। তাঁদের পরিচয় এখন শরণার্থী৷ আবার দেশের মধ্যে ছিন্নমূল হয়ে ঘুরছেন বহু নাগরিক।”

রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন। তবে, ৯০ শতাংশই নারী এবং শিশু৷ এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন ২০ লক্ষেরও বেশি ইউক্রেনীয়। রোমানিয়ায় আশ্রয় দিয়েছেন ৫ লক্ষ ৩০ হাজারের কাছাকাছি শরণার্থী। এ ছাড়াও মোলদোভায় আশ্রয় নিয়েছেন ৩ লক্ষ ৬২ হাজারের বেশি মানুষ৷ দেশের অভ্যন্তরেই বাস্তুচ্যুত ৬৫ লক্ষ মানুষ৷ 

এদিকে, রুশ আগ্রাসন রুখতে দেশের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের দেশ ছাড়ার উপর নিষিদ্ধ জারি করে ইউক্রেন সরকার। তাঁদের সেনায় যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু সংগঠন ইউনিসেফ জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে ইউরোপ জুড়ে শরণার্থী সঙ্কটের পাশাপাশি শিশুপাচার এবং নিপীড়নের ঘটনা প্রবল ভাবে বেড়ে যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হল ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠতা৷ যা নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে পুতিনের৷ মস্কো চায় না ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হোক৷ কারণ, ইউক্রেন ন্যাটো গোষ্ঠীর সদস্য হলেই আমেরিকা এবং ন্যাটোর অন্তর্গত দেশগুলি রাশিয়াকে ভৌগোলিক ভাবে ঘিরে ফেলবে। ঠিক সেই কারণেই মৌখিক চুক্তি অগ্রাহ্য করে ইউক্রেনকে ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে পুতিনের দাবি।