এমজেএনে নকল রুখতে সংলগ্ন এলাকায় রাতেও কড়া নিরাপত্তারক্ষী

এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তারি পরীক্ষায় নকল রুখতে রাতেও পরীক্ষার হল সংলগ্ন এলাকাগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ১৬ জানুয়ারি থেকে সেখানে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের পার্ট ওয়ানের পরীক্ষা শুরু হবে। তার আগে সোমবার ওই পরীক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের ডেকে পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত নিয়মকানুন জানিয়ে দেওয়া হয়। নকল সংক্রান্ত কোনওরকম ঘটনার কথা সামনে এলে তৎক্ষণাৎ সেই পরীক্ষার খাতা বাতিল করা হবে বলে পড়ুয়াদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন অধ্যক্ষ। এছাড়া এতদিন শুধুমাত্র পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় সেখানে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকতেন। কিন্তু বারবার নকল ধরা পড়া ও তার জেরে ভাঙচুরের ঘটনায় এখন থেকে রাতেও নিরাপত্তারক্ষী রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে। এই বিষয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বক্তব্য, ‘যেহেতু আগে দু’বার ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে তাই এখন বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রাতেও নিরাপত্তারক্ষী রাখা থাকবে। পরবর্তীতে যাঁরা পরীক্ষা দেবে তাদের ডাকা হয়েছিল। পরীক্ষা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়, সেজন্য কী কী করণীয় তা বলে দেওয়া হয়েছে।’

শেষ কয়েকদিনে বারবার এমজেএন মেডিকেলের পরীক্ষার হল থেকে নকল উদ্ধারের ঘটনা সামনে আসায় কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি বেড়েছে। নকলের অভিযোগে পাঁচজন পরীক্ষার্থীর খাতা বাতিল করায় সেই ক্ষোভে মেডিকেলের একাধিক শৌচালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী পরীক্ষাগুলিতে যাতে নতুন করে আর কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি না হতে হয় সেজন্য আরও কঠোর হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার অধ্যক্ষ নিজে পরীক্ষার্থী, অধ্যাপক সহ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের ডেকে বৈঠক করেন। সেখানে পরীক্ষায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে যে কড়া পদক্ষেপ করা হবে তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ীই পরীক্ষা পরিচালনা করা হবে। একাধিক ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারিও চলবে। এদিকে, সোমবার দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

পরীক্ষার দিনগুলিতে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি পুলিশও মোতায়েন থাকে। তবে গত কয়েকদিনে দেখা গিয়েছে পরীক্ষা শেষের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলে হয়ে যেতেই সেখানে ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার বাড়তি সময়েও দুজন নিরাপত্তারক্ষী রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে, হাসপাতালে নকল কাণ্ডের জেরে অভিযোগের তির গিয়েছে চিকিৎসকদের উত্তরবঙ্গ লবির ছত্রছায়ায় থাকা কিছু পড়ুয়ার দিকে। তাঁদের নামে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। তবে এবারই প্রথম নয়, আগের পরীক্ষাগুলিতেও ওই পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে নকল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়া আরজি কর কাণ্ডের সময় গোটা রাজ্য উত্তাল হয়েছিল যে থ্রেট কালচার নিয়ে, এমজেএন মেডিকেলে সেই থ্রেট কালচারের পান্ডা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন ওই পড়ুয়ারাই। সেগুলির তদন্তের জন্য কয়েকমাস আগেই মেডিকেলে একটি তদন্তকারী কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু সেই কমিটি এখনও পর্যন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। সেবিষয়ে অধ্যক্ষ নির্মলকুমার মণ্ডল বলেছেন, ‘কমিটির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা শীঘ্রই রিপোর্ট জমা দেবে বলেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’ মেডিকেলের এক পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘কিছু পড়ুয়ার জন্য মেডিকেলের বদনাম হচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে এধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য নয়।’