জঙ্গলমহলে মাওবাদী পোস্টার প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই জঙ্গলমহলে মাওবাদী পোস্টার সাঁটছে বিজেপি। বুধবার রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় মাওবাদী ইস্যুতে এই অভিযোগ তুলেই গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাওবাদীরা ফের জঙ্গলমহলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে খবর রটানো হয়েছে। এমনকী মাওবাদী ধুয়ো তুলতে  বেশ কিছু পোস্টার লাগানো হয়েছে ঝাড়গ্রামের কয়েকটি জায়গায়। এই বিষয়ে প্রকৃত চিত্রটা ঠিক কী, তা ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্তের কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক বলেন, এলাকার ব্যবসায়ী, গ্রামের বাসিন্দা ও অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলে মাওবাদী কার্যকলাপের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা-দুটো পোস্টার বিজেপি লাগিয়ে দিয়েছে। আর সেই নিয়ে মাওবাদী মাওবাদী করে রাজনীতি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি করা হচ্ছে।’ এর পরেই তিনি জেলাশাসককে নির্দেশ দেন মানুষের সামনে বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে প্রচার চালাতে।

মুখ্যমন্ত্রী জেলার পুলিস সুপারকেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে বেলপাহাড়ী সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেন। কারণ ঝাড়খণ্ড থেকে বহিরাগতরা এসে রাজ্যে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে। ডিজির সাম্প্রতিক জঙ্গলমহল পরিদর্শনের পরে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও দুজনের উপর নজর রাখা হয়েছে। স্কোয়াড বা লিঙ্কম্যান হিসেবে মাওবাদীদের হয়ে কাজ করা আত্মসমর্পণকারী ১০ হাজার জনকে চাকরি দিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়েছে রাজ্য। দু’একজন যদি বাকি থেকে থাকে, তাহলে তাদের নাম ডিজিকে পাঠাতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন মমতা।  মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই মাসের শেষ থেকেই তিনি জেলা সফর শুরু করবেন। খুব শীঘ্রই ঝাড়গ্রাম যাবেন।

বান্ন সভাঘরে বুধবারের বৈঠক থেকে বিজেপি ও সিপিএম এর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অশান্তির উস্কানি দেওয়ারও অভিযোগ তুলে তাদের এক হাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি চাকরির নামে প্রতারণা, তোলা আদায়, বেআইনি অস্ত্র পাচারের মতো ঘটনায় কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি। । এমনকী কোনও ঘটনা সত্যি হলে কোনও রং না দেখে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন মমতা। তাঁর কথায়,  ‘কোনও বড় নেতাও যদি দুর্নীতি করে, তাহলে অ্যাকশন নিতে হবে। পার্টি টাকা তুলতে বলেনি। এই কথাটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। জেলা পরিষদ ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি যেন ভালো কাজ করে। কারও চুরির দায় আমরা নেব না।’
হাঁসখালি ও বগটুইয়ের ঘটনা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করার পাশাপাশি পুলিসের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দৃশ্যত বিরক্ত মমতা পুলিসের গাফিলতির জন্যই এই ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। বগটুই কাণ্ডের জন্য এক ডিএসপি এবং হাঁসখালি ইস্যুতেও রানাঘাট পুলিস জেলার এসপিকে ভর্ৎসনা করেন। পাশাপাশি প্রত্যয়ী মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা—‘আমরা রাজ্যে উন্নাও বা হাথরস হতে দেব না।’