রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে হুমকি কেএলও’র

উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি যখন নিয়ে উত্তাল রাজ্য, সেই সময় তৃণমূল নেতৃত্বকে হুমকি দিল কামতাপুর লিবারেশন। এই ঘটনায় জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।  সম্প্রতি কেএলও এক প্রেস বিবৃতিতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মন ও তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায়কে হুশিয়ারি দেয়। পৃথক রাজ্যের দাবি সমর্থন না করার জন্যই তৃণমূল নেতাদের হুমকি দিয়েছে বিচ্ছিন্নবাদী এই গোষ্ঠী। ঘটনায় কেএলও প্রধান জীবন সিংহের বিরুদ্ধে থানায়  অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল।

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে। তবে উত্তরবঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের থেকে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের এই  ফলাফলের পরেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য ঘোষণার দাবি উঠতে থাকে। বিজেপির একাধিক সাংসদ, বিধায়ক এই দাবিকে সমর্থন জানায়। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বাংলা ভাগের এই চক্রান্তের বিরোধিতা করে। কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় কলকাতায় গিয়ে  রাজ্য নেতৃত্বের সাথে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। জেলাতেও পৃথক ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই দাবিকে নস্যাৎ করেন প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মন সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্বরা।

উত্তরবঙ্গকে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে কামতাপুর লিবারেশন। রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকা গুলি নিয়ে পৃথক রাজ্য চায় কে এল ও। বিচ্ছিন্নবাদী এই সংগঠন নেতা জীবন সিংহের নেতৃত্বে এই দাবিতে একাধিক নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে ভুটানে সেনা অভিযানের পরে কেএলও শক্তি অনেকটা কমে গেলেও বর্তমানে ফের নড়ে চড়ে উঠছে তারা। সম্প্রতি একাধিক ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন কেএলও প্রধান। ২৩শে জুন কেএলও এক প্রেস বিবৃতি জারি করে। সেই বিবৃতি তে জানানো হয়েছে, পার্থপ্রতিম রায় ও বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ কলকাতার নেতাদের তালে তাল মিলিয়ে কামতাপুর আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওঁরা ভুলে গিয়েছেন যাঁরা পৃথক রাজ্যের আন্দোলনকারীকে আজ বিচ্ছিন্নতাবাদী বলছেন, কিছু দিন আগে তাঁরাই কোচবিহারের কামতাপুর দলগুলির মদতে নির্বাচন উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের নিজস্বতা বলে কিছু নেই। এরা দলদাসে পরিণত হয়েছে।’

এই বিবৃতির ঘটনায় কোতয়ালী থানায় কেএলও’র বিরুদ্ধে  অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা সঞ্জীব রাজভর কেএলও’র বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করেন। রাহুল রায় নামে অন্য এক তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার কে এই ঘটনার প্রতিবাদে স্মারক লিপি দেওয়া হয়। তৃণমূল কংগ্রসের জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় বলেন, এই ঘটনায় আমি চিন্তিত নই। গণতান্ত্রিক দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করা যায় না। রাজবংশী মানুষ মনীষী পঞ্চানন বর্মার আদর্শে অনুপ্রানিত তারা জানেন  রাজ্য সরকার বিগত ১০ বছরে  কোচবিহারে একাধিক উন্নয়ন করেছেন।

বিনয় কৃষ্ণ বর্মন ও পার্থ প্রতিম রায় কোচবিহারের রাজবংশী সম্প্রদায়ের নেতা। কোচবিহারের তৃণমূলের রাজবংশী মুখ হিসেবে এরাই পরিচিত। কেএলও রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য আন্দোলন করছে বলে দাবি করে। কোচবিহারের ভুমিপুত্রদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবি জানায় তারা। আর সেই দাবির বিরোধিতা করায় এই দুই রাজবংশী নেতার উপর গোসা হয়েছে কেএলও। সেই কারনে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।