গরুপাচার কাণ্ডে কষ্টে কেষ্ট৷ কেষ্টর পাশাপাশি চাপ বেড়েছে অনুব্রত-কন্যারও৷ তবে এই পরিস্থিতিতে অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা সহ শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ছয় জনের আদালতে হাজিরার নির্দেশ প্রত্যাহার৷ টেট সার্টিফিকেট পেশ করার নির্দেশও প্রত্যাহার করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷
অর্থাৎ গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলের মেয়েকে আপাতত আদালতে হাজিরা দিতে হবে না৷ টেট সংক্রান্ত একটি অতিরিক্ত মামলায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল সুকন্যা মণ্ডলকে৷ সেই মতো তিনি আদালতে চলেও এসেছিলেন৷ কিন্তু, শুনানি শুরু হলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, অতিরিক্ত হলফনাম গ্রহণযোগ্য নয়৷
অনুব্রত-কন্যার নিয়োগ বৈধ নয় বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল আদালতে। সেই মামলায় এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বুধবার যে হলফনামা পেশ করা হয়েছিল, সেই অতিরিক্ত হলফনামা আদালত গ্রহণ করছে না৷ সেই হলফনামা গ্রহণযোগ্য নয়৷
উল্লেখ্য, মূল প্রাথমিকের যে দুটি মামলা চলছে তার মধ্যে একটি মামলায় এই অতিরিক্ত হলফমানা পেশ করা হয়েছিল৷ গতকাল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই অতিরিক্ত হলফনামা খতিয়ে দেখেন৷ এদিন তাঁর পর্যবেক্ষণ, দুটি মূল মামলার সঙ্গে এই অতিরিক্ত হলফনামা গ্রহণযোগ্য নয়৷
এই অতিরিক্ত হলফনামাতেই সুকন্যা সহ অনুব্রত মণ্ডলের ভাই, ভাইপো ও ঘনিষ্ঠ ছয় জনের বিরুদ্ধ অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ অভিযোগ, টেট পরীক্ষা ছাড়াই সুকন্য প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছেন৷
কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর এক দিনও স্কুলে যাননি৷ বাড়িতে বসেই বেতন সংগ্রহ করেছেন৷ শুধু তাই নয়, স্কুলে হাজিরার খাতা পাঠানো হত তাঁর বাড়িতে৷ শুধু সুকন্যাই নন, বাকি পাঁচ জনের কেউই টেট পাশ করেননি বলেও অভিযোগ করা হয়৷
এই অভিযোগ ওঠার পরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, সুকন্যা সহ ছয়জনকে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টের মধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে হবে৷ তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠীকে। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকেও দ্রুত নগেন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
সেইসঙ্গে বলা হয়, টেট পাশের সংশাপত্র ও নিয়োগ পত্র এজলাসে পেশ করতে হবে তাঁদের৷ এর পর থেকেই কেষ্ট কন্যার বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে৷ কিন্তু এদিন মামলার শুনানি শুরু হওয়ার আদালত জানায়, এই অতিরিক্ত হলফনামা গ্রহণ করা হচ্ছে না৷
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, হলফনামা পড়ার পরেই আদালত এই ছয়জনকে চিহ্নিত করে তাঁদের হাজির দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল৷ এমনকী জেলা পুলিশ সুপারকে দিয়ে তাঁদের আনানোর নির্দেশ দেওয়া হয়৷ অথচ আদালতের নির্দেশ মেনে আজ যখন তাঁরা আদালতে এলেন তখন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকুও পেলেন না৷
কালকে যে হলফনামা এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আজ সেই হলফনামাই এতটা গুরুত্বীন হয়ে গেল যে, হাজিরার নির্দেশ প্রত্যাহার করা হল৷ কুণাল আরও বলেন, ‘‘কাউকে সমর্থন রা রক্ষা করা নয়৷ ঠিকটা ঠিক আর ভুলটা ভুল৷
যদি দেখা যায়, আত্মপক্ষ সমর্থনের আগেই কাউকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার পরিস্থিতি তৈরি করা হয়, সেটা দুর্ভাগ্যজনক৷ এটা আদালতের কাছে কাম্য নয়৷ আদালত ও বিচারপতির উপর পূর্ণ সম্মান রেখেও একথা বলতে হচ্ছে৷ কারণ, গতকাল দিনভর একজন তরুণীকে তীরবিদ্ধ করা হয়েছে৷ এর পরেও তিনি কোর্টে হাজিরা দিলেন৷ কিন্তু নিজের কথা বলার সুযোগ পেলেন না৷’’