আজ থেকে বছর দুই আগে সংক্রমনের উৎপত্তি হয়েছিল চিন থেকেই। এর পর ধীরে ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। এরই মধ্যে বিগত কয়েকদিনের স্বস্তির পর এক এক করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে করোনা। সাম্প্রতিক এই বাড়বাড়ন্তের উৎসস্থল এবারও করোনার আঁতুড়ঘর চিন। চলতি বছরের শুরু থেকেই চিনে হু হু করে ছড়াতে শুরু করেছে এই ভাইরাস। ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে সাংহাই, বেজিংসহ চিনের একাধিক প্রান্তের নাগরিকদের মানতে হচ্ছে কঠোর লকডাউন।
খাবারের খোঁজে বাড়ির বাইরে বেরোনোর উপরেও জারি করা হয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। সবে মিলে চিনে পুনরায় ফিরেছে ২০২০ সালের দুঃস্বপ্ন। এমতাবস্থায় জানা যাচ্ছে এই মুহূর্তে চিনের সাংহাইয়ের অবস্থা সবথেকে শোচনীয়। চিনের এই প্রদেশেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। আর তাই ইতিমধ্যেই এই প্রদেশের বাসিন্দাদের উপর চাপানো হয়েছে অত্যন্ত কঠোর লকডাউন এবং করোনার বিধি-নিষেধ। তবে তাতেও বাঁধ মানছে না সংক্রমণ। আর তাতেই কোন উপায়ান্তর না পেয়ে শেষমেষ সাংহাইয়ের যে সমস্ত বাসিন্দারা করোনা আক্রান্ত নন তাঁদের ঘরছাড়া করতে বাধ্য হচ্ছে চিন সরকার।
সম্প্রতি জানা গিয়েছে সাংহাইয়ের বাসিন্দারা যারা ইতিমধ্যেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়লাভ করেছেন কিংবা এখনও পর্যন্ত এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হননি তাদের সাংহাই প্রদেশ থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অস্থায়ী পৃথকীকরণ কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে সাংহাইয়ের বাসিন্দাদের রীতিমতো বাধ্য করা হচ্ছে ঘরবাড়ি ছাড়তে। সরকারের তরফ থেকে তাঁদের বাসে করে ওই অস্থায়ী কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে বলে খবর।
উল্লেখ্য সাংহাইয়ে কমপক্ষে ২ কোটি ৫০ লক্ষ বাসিন্দার বসবাস, যাদের মধ্যে অধিকাংশের ওপর ইতিমধ্যেই করোনার ছোবল পড়েছে। তবে এক্ষেত্রে স্বস্তি একটাই, এই মুহূর্তে যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশেরই চিকিৎসা হচ্ছে বাড়িতে। হোম আইসোলেশনে থেকেই সিংহভাগ আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠছেন। আর সে কথা মাথায় রেখেই সমগ্র সাংহাই জুড়ে জারি করা হয়েছিল কঠোর লকডাউন বিধি-নিষেধ। কিন্তু ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষ করোনামুক্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তারা যাতে ভবিষ্যতে আবারও করোনার গ্রাসে না পড়েন তার জন্যই তাঁদের এই অস্থায়ী কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে খবর। স্থানীয় সূত্রে খবর, এক্ষেত্রে যে সমস্ত বাসিন্দারা অস্থায়ী কেন্দ্রে যাওয়াতে আপত্তি জানাচ্ছেন তাঁদের কার্যত জোর করে ওই কেন্দ্রগুলোতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ওই শহরেরই এক বাসিন্দা স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে কয়েকদিন আগে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বলেছে আমাদের কম্পাউন্ডে বেশকিছু করোনা পজিটিভ কেস রয়েছে। তাই আমরা যদি এখানে বসবাস করি তাহলে আমাদেরও এই রোগে সংক্রমিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে কোনও বিকল্প না থাকায় শেষমেষ আমরা ওই অস্থায়ী কেন্দ্রে যেতে রাজি হই।’ তবে এক্ষেত্রে একটি অসুবিধার কথা জানা যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, সংক্রমণ রুখতে বাসিন্দাদের অস্থায়ী কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কবে তাঁদের আবার পুনরায় বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসা হবে সেই ব্যাপারে রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা।
উল্লেখ্য, সোমবার শুধুমাত্র সাংহাইতেই নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় চিনের এই প্রদেশেই ৩২ জন করোনার বলি হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, এই সংক্রমণ যাতে শুধুমাত্র সাংহাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, চিনের অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্যই এত কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। স্থানীয় প্রশাসন দিনরাত এক করে ওই এলাকার সাধারন বাসিন্দাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন।