স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেছিলেন হাওড়ার শিবপুরের রাজা রামব্রম্ভ রায়চৌধুরী। এবার ৩৩৯ বছরে পড়ল এই পুজো । নিয়ম মেনে আজও দেবী দুর্গার ভাসানের পর তার মুকুট পরানো হয় গৃহদেবতাকে। তিনদিন হয় পাঁঠা বলি। রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোর নেপথ্যে রয়েছে এক কাহিনী। কথিত আছে, রায়চৌধুরী বাড়ির রাজকন্যা রাজবাড়ির কাছেই বালি পুকুরে রোজ দুপুরে পদ্মাবতী নামে একটি মেয়ের সঙ্গে খেলা করতেন। খেলা শেষে পুকুরে নেমে স্নানও করতেন। শিবপুরের রাজা রামব্রম্ভ রায়চৌধুরী মেয়ের কীর্তিকলাপ জানতে পেরে তাঁর পেয়াদাদের পাঠিয়েছিলেন পুকুর থেকে পদ্মাবতীকে খুঁজে নিয়ে আসতে। কিন্তু পেয়াদারা ওই বালি পুকুরে গিয়ে দেখেন পুকুর ধারে শুধু পায়ের ছাপ। আর সেখানে কেউ নেই।
সেই রাতেই পদ্মাবতী রাজা রামব্রম্ভকে স্বপ্ন দেন। স্বপ্নে তিনি রাজাকে বলেন, তিনি আসলে দেবী দুর্গা। তিনি রাজকন্যার বন্ধু রূপে রোজ দুপুরে বালি পুকুরে তাঁর সঙ্গে খেলা করেন। তাঁর পুজো যেন শিবপুরের রায়চৌধুরী পরিবারে হয়। রাজা রামব্রম্ভ এই স্বপ্ন দেখার পর তাঁর চোখ খোলে। ইংরেজির ১৬৮৫ সাল ও বাংলার ১০৯২ বঙ্গাব্দ থেকে শিবপুরের রায়চৌধুরী পরিবারে আজও দুর্গাপুজো হচ্ছে। আজও রাজা রামব্রম্ভ রায়চৌধুরীর বংশধররা এই পুজো করেন। এ বছর ৩৩৯ বছরে পদার্পন করলে রাজ পরিবারের এই পুজো। এই বাড়ির গৃহদেবতা মা ব্যাতাই চন্ডী।
জানা গিয়েছে, রায়চৌধুরী বাড়ির একটি ঘরে একটি বেলগাছ রয়েছে। সেই বেলঘরেই দেবী দুর্গার ঘট রাখা হয়। দুর্গা দালানে দেবী মূর্তির পাশাপাশি দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে বেলঘরে রাখা ওই ঘটে পুজো করা হয়। দশমীর দিন এই ঘট বিসর্জন করার পাশাপাশি দেবী দুর্গার মূর্তি ভাসান দিয়ে তাঁর মাথার মুকুট গৃহদেবতা ব্যাতাইচণ্ডীর মাথায় পরানো হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনদিনই পাঁঠা বলি হয় রায়চৌধুরী পরিবারে। দশমীর দিন ভাসানের পর এলাকার বাসিন্দাদের শান্তির জল দেওয়া হয়। শিবপুরে রায়চৌধুরী পরিবারের অন্যতম সদস্য অরুন রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘রাজা রামব্রম্ভ রায়চৌধুরীর স্বপ্নে আসা পদ্মাবতী প্রতিবছর দেবী দুর্গা রূপে রায়চৌধুরী পরিবারে আসেন ও পুজো নেন। প্রতি বছর দেশ বিদেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা এই পুজোর জন্য ছুটে আসেন। পুজোর চারদিন সকলে চুটিয়ে আনন্দ করেন।’’