বাড়তে থাকা বাজারদরের মাঝেই চিন্তা বাড়ছে চালের দাম নিয়ে

বিগত দু বছরের বেশি সময় ধরে তান্ডব চলছে করোনা সংক্রমণের৷ আর এই সময় থেকেই প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বাজারদর৷ সবজি থেকে মাছ-মাংস, বাজারে ঢুকলেই ছ্যাঁকা লাগছে মধ্যবিত্তের পকেটে৷ এই অগ্নিমূল্যের বাজারে ডাল-ভাত খেয়ে যে দিন গুজরান করবে, তাও বুঝি এখন বড় দায়!

ডাল, আলুর দাম আগেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল, এবার পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের দাম৷ কী ভাবে চলবে গেরস্তের হেঁশেলে। জোগানে ঘাটতি না থাকলেও যে ভাবে চালের দাম বাড়ছে, তাতে রীতিমতো হিমশিম খাওয়ার জোগাড়।

মিনিকেট-বাঁশকাঠির দাম তো লাফিয়ে বেড়েইছে, স্বর্ণ, রত্না-সহ অন্যান্য চালের দামও উর্ধ্বমুখী। পরিস্থিতি এটতাই জটিল হয়ে উঠছে যে নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে আলুসিদ্ধ ভাত জোগাড় করাটাও এখন মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ গত দেড় মাসে খুচরো বাজারে লাফিয়ে বেড়েছে চালের দাম। তবে বাজারে জোগানের অভাব নেই৷ তাহলে কেন বাড়ছে চালের দাম?

আসলে প্রচুর চাল বিদেশে, বিশেষত বাংলাদেশে রফতানি করা হচ্ছে৷ আর সেটাই দাম বাড়ার জন্য অনেকটা দায়ী৷ বর্তমান বাজার দরের থেকে কিছুটা বেশি দামেই চাল বাইরে রফতানি হয়ে যাচ্ছে। মিনিকেট থেকে গোবিন্দভোগ, রত্না, বাঁশকাঠি, বাঁশমতি প্রায় সব চালের দামই গত দু’মাসে ৬ থেকে ১০ টাকা প্রতি কেজিতে বেড়েছে।

ব্যবসায়ীদের কথায়, বাংলাদেশে উৎপাদন ও জোগানে ঘাটতি রয়েছে। সেকারণেই এ রাজ্যের চালে টান পড়েছে। বাংলাদেশে চালের চাহিদা এ রাজ্যের থেকেও অনেকটাই বেশি। সে দেশে সব থেকে বেশি রফতানি হয়েছে স্বর্ণ চাল৷ তবে শুধু বাংলাদেশ নয়৷ লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুর সর্বত্রই বাঙালিরা রয়েছেন৷ ফলে সেই সকল দেশেও চাল রফতানি হচ্ছে৷

একইসঙ্গে বাংলা থেকে চাল যাচ্ছে অন্যান্য রাজ্যেও। চালব্যবসায়ীদের কথায়, এবার চাষিরা ধানের জন্য পর্যাপ্ত দাম পেয়েছেন৷ রাইসমিলেও যথেষ্ট পরিমাণে ধান মজুত রয়েছে। এর পরেও খুচরো বাজারে দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে দামের বিরাট ফারাক রয়ে গিয়েছে৷

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বর্ধমান, হুগলী, হাওড়া, বীরভূম, মেদিনীপুরে এবার ধানের ফলন বেশ ভালই হয়েছে। তা সত্ত্বেও দাম বাড়ছে৷ কারণ বিদেশে চালের রফতানি৷ এক চাল ব্যবসায়ী জানান, শুক্রবার পাইকারি বাজারে যেখানে এক কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৪১ টাকা, খুচরো বাজারে সেই চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে৷ স্বর্ণ চাল একটু মোটা।

পাইকারি বাজারে এই চালের দাম ২৫ থেকে সাড়ে ২৫ টাকা। সেটাই খুচরো বাজারে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা কিজিতে বিক্র হয়েছে। অর্থাৎ পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরো বাজারের ফারাক থেকে যাচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১২ টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “চাষিরা এ বছর চালের ভাল দর পেয়েছেন। সাধারণ মানুষকে সরকার রেশনে বিনামূল্যে চাল দিচ্ছে। চাষিদের কথাটাও তো ভাবতে হবে৷”