ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই সকাল থেকে পুজো দিতে রীতিমতো লাইন মদনমোহন বাড়িতে

বদলেছে সময়, বদলেছে ট্রেন্ড, পরিবর্তন এসেছে মানুষের মধ্যেও। একটা সময় যেখানে কোচবিহারে ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনের চল সেরকম ছিল না, সেখানে এখন অন্য ছবি। পরিবর্তন শুধু উদযাপনে নয় ভক্তি প্রদর্শনেও। আগে ইংরেজি নতুন বছরে পরিবারের সকলের সঙ্গে পিকনিক কিংবা ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও মন্দিরে পুজো দিয়ে বছর শুরু করতেন খুব কম মানুষই। বাংলা নববর্ষের ক্ষেত্রে ছবিটা থাকত অন্যরকম। সেসময় অবশ্য প্রাণের ঠাকুর মদনমোহনের কাছে পুজো দিতে মন্দিরে ভিড় করতেন অনেকে। তবে বছর পনেরো থেকে সেই ধারণায় এসেছে পরিবর্তন। ইদানীং বিয়ে হোক বা ইংরেজি নতুন বছর, সবেতেই কোচবিহারবাসীর ভরসাস্থল মদনমোহন। গত কয়েকবছরের মতো এবারেও মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে নতুন বছর শুরু করলেন কোচবিহারবাসী।

মদনমোহন মন্দিরের রাজপুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য দীর্ঘ ৪৫ বছর থেকেই মন্দিরের পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আপাতত ছুটিতে রয়েছেন তিনি। এবিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘আগে পয়লা বৈশাখের সকালে বাঙালিরা মন্দিরে পুজো দিতে ভিড় জমাতেন। সেসময় ইংরেজি নতুন বছরে মন্দিরে একেবারেই ভিড় হত না। তবে গত পনেরো-কুড়ি বছর ধরে অনেকেই বিশেষ দিনগুলিতে মন্দিরে আসেন।’ ইদানীং ইংরেজি নতুন বছরে মন্দিরে বাঁধভাঙ্গা ভিড় হয় বলে জানালেন তিনি। শহরের প্রবীণ বাসিন্দা অরূপ গুহও শোনালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় ইংরেজি নববর্ষে মন্দিরে এতটা ভিড় কিন্তু দেখা যেত না। বছর পনেরো ধরে এই ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকলেই দিনটি উপভোগ করছেন।’

নতুন বছরের প্রথম সকাল ছিল কুয়াশায় মোড়া। কিন্তু তাতে কি আর প্রার্থনা থেমে থাকে? ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেই এদিন সকাল থেকে পুজো দিতে রীতিমতো লাইন দেখা গিয়েছে মদনমোহনবাড়িতে। ভিড় সামলাতে মন্দিরে ছিল অতিরিক্ত পাহারাও। বেলা যতই গড়িয়েছে, ততই ভিড় বেড়েছে মন্দিরে। সন্ধেতে মন্দির চত্বর ছিল ভিড়ে ঠাসা। এদিন পুণ্ডিবাড়ি থেকে মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলেন কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘প্রতিবছর বিশেষ এই দিনে মন্দিরে আসা হয়ে ওঠে না। তাই আগেভাগেই বান্ধবীরা মিলে মন্দিরে আসার প্ল্যানিং করেছি। তবে ভিড়ের জেরে হিমসিম খেয়ে ফিরতে হয়েছে।’ মদনমোহন মন্দিরে সারাদিনই ভিড় থাকলেও, শহরের অন্য মন্দিরগুলি ছিল সে তুলনায় অনেকটাই ফাঁকা। তবে শহর সংলগ্ন মধুপুরধাম, বাণেশ্বর মন্দিরে পর্যটকদের আনাগোনা এদিনও দেখা গিয়েছে।