অকালেই থমকে গেলো তার জীবন, কে ছিলেন সাইরাস মিস্ত্রি

গত সপ্তাহের শেষ দিন অর্থাৎ গতকাল আচমকাই এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যানের৷ তিনি ছিলেন রতন টাটার এককালের উত্তরাধিকার৷ উল্কার বেগে উত্থান হয়েছিল তাঁর৷ সেই সেইরাস মিস্ত্রির বিদায়ও হল আকস্মিক৷

রবিবার দুপুর ৩টে৷ মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান৷ সেই সঙ্গে শেষ হল কর্পোরেট দুনিয়ার এক অধ্যায়৷ শাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠীর মালিক সাইরাস মিস্ত্রি ছিলেন টাটা গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার পালোনজি মিস্ত্রির ছোট ছেলে।

যাঁর পদবীর শেষে ‘টাটা’ না থাকলেও এক সময় টাটার ব্যবসা সামলেছিলেন৷ ২০১২ সালে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। তবে, মাত্র চার বছরের মধ্যেই ঘটে বিচ্ছেদ৷ ২০১৬ সালে তাঁকে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত করা হয়৷ এর আগে পর্যন্ত মিস্ত্রিদের সঙ্গে টাটাদের সম্পর্ক ছিল মধুর। কিন্তু কেন টাটা গোষ্ঠী থেকে সরানো হয়েছিল সাইরাসকে?

আসলে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বদল এনেছিলেন সাইরাস মিস্ত্রি। তাঁর সেই সকল নীতির জেরে টাটা গোষ্ঠীর ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার বা মূলধনের ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণ৷

তবে শেয়ারহোল্ডারদের আয় বাড়েনি৷ বরং কমেছিল। অভিযোগ আরও রয়েছে৷ জানা যায়, চেয়ারম্যানের কুর্সিতে বসেই সংস্থায় রতন টাটার বিশ্বস্ত বলে পরিচিত ব্যক্তিদের সরিয়ে দিয়েছিলেন সাইরাস৷ সেই জায়গায় বসিয়েছিলেন নিজের আস্থাভাজনদের৷ পাশাপাশি ব্রিটেনে টাটা স্টিল পোর্ট প্ল্যান্ট বিক্রির প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। যার ফলে বিদেশে টাটাদের যে সুনাম রয়েছে তা কিছুটা হলেও ক্ষুন্ন হয়৷

এর পর ডোকোমো গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধ টাটাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খাদের কিনারে এনে দেয়৷ সেই চানাপোড়েনই ছিল কফিনের শেষ পেরেক৷ এই বিরোধের মাশুল দিতে হয়েছিল টাটাকে৷ জাপানি গোষ্ঠীকে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার দিতে হয় সংস্থাকে৷

অবশেষে ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর, সাইরাস মিস্ত্রিকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ এর কয়েক মাস পর, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হোল্ডিং সংস্থার বোর্ডের ডিরেক্টর পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় সাইরাসকে।

১৯৬৮ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন বম্বে প্রেসিডেন্সিতে এক পার্সি পরিবারে জন্ম হয় সাইরাস মিস্ত্রির। মা প্যাটসি পেরিন ডুবাস ছিলেন আইরিশ। বাবা পালোনজি মিস্ত্রিও পরবর্তীকালে আয়ারল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। সাইরাসের দাদা সাপুর মিস্ত্রিও একই পথে হাঁটেন৷ তবে সে পথ বেছে নেননি সাইরাস।

লন্ডনের বিখ্যাত ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর পারিবারিক নির্মাণ ব্যবসাতেই যোগ দিয়েছিলেন সাইরাস৷ ২০০৬ সালে টাটা গোষ্ঠীর বোর্ড থেকে পালোনজি মিস্ত্রি অবসর নেন। তখন সাইরাসের বয়স ৩৮৷ অল্প বয়সেই বাবার পদে আসীন হন তিনি।

তারপর থেকে টাটা ইন্ডাস্ট্রিজ, টাটা স্টিল, টাটা কেমিক্যালস এবং টাটা মোটরসের বিভিন্ন পদে থেকেছেন৷  কঠোর পরিশ্রমও করেছেন৷ অল্প সময়ের মধ্যেই ফোর্বস গোকাক, ইউনাইটেড মোটরস (ইন্ডিয়া) এবং শাপুরজি পালোনজি অ্যান্ড কোং-এর মতো  বেশ কয়েকটি সংস্থার ডিরেক্টর হন সাইরাস মিস্ত্রি।

টাটাদের সঙ্গে মিস্ত্রিদের শুধু ব্যবসায়িক নয়, পারিবারিক সম্পর্কও ছিল৷ পালোনজি মিস্ত্রির মেয়ে তথা সাইরাসের বোন আলু মিস্ত্রির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিলেন রতন টাটার সৎভাই নোয়েল মিস্ত্রির। যদিও ব্যবসার তিক্ততা সব সম্পর্ককে ছাপিয়ে গিয়েছিল।