রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মাঝের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। দাবি উঠেছে রাজ্যপালকে সমস্ত পদ থেকে সরানোর। এই দাবিতে অবশেষে স্থির হলো রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে বসছেন। মন্ত্রিসভায় এই বিষয়ে শিলমোহর পড়ে গেল। এরপর বিল নিয়ে আসা হবে বিধানসভায়। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিরোধীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরব হয়েছেন। রাজ্যপালও ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর আচার্য হওয়ার প্রসঙ্গে।
দিন কয়েক আগেই সরকারিভাবে জানানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে বসবেন। এই নিয়ে চূড়ান্ত রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়। আচার্য পদে রয়েছেন রাজ্যপাল। দীর্ঘদিনের ইতিহাসে রাজ্যের রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে রয়েছেন। তাহলে কি সেই নিয়ম বদলে ফেলতে চাইছে তৃণমূল?
আলোচনা, জল্পনা শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক। বিভিন্ন বিষয়ে নবান্ন ও রাজভবনের সংঘাত দেখতে পাওয়া যায়। শিক্ষাক্ষেত্রেও একাধিকবার এই ঘটনা সামনে এসেছে। রাজ্যপালকে এবার শিক্ষাক্ষেত্র থেকে কি কার্যত ছেঁটে ফেলার পন্থা নিল নবান্ন? সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার বিষয়ে শিলমোহর পড়ল। মন্ত্রিসভার সকলে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজ্যের নিজস্ব কৃষি, প্রাণিসম্পদ, স্বাস্থ্য, মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য এবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন। রাজ্যপালকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগোলো তৃণমূল কংগ্রেস। একথাই মনে করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে এই সিদ্ধান্ত।
রাজ্য সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ করতে চলেছে। এই বক্তব্য উঠেছে বিরোধী পক্ষ থেক। সিপিএমের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছ। মহাম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, এটি একটি রোগ। এই রোগে শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, গোটা মন্ত্রিসভা ও তার পারিষদবর্গ আক্রান্ত হয়েছেন। ক্ষমতার একনায়কতন্ত্র চলছে। নাৎসিজিমের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে রাজ্যের বর্তমান শাসন অবস্থাকে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় পদে আচার্য থাকুক কোনও শিক্ষাবিদ। রাজনৈতিক কোনও ব্যক্তিত্বর আচার্য পদে থাকা উচিত নয়। একথাই দাবি করছে সিপিএম।
রাজ্যের আচার্য পদ নিয়ে তুমুল জল ঘোলা চলছে। নবান্ন যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা কখনওই মানা যায় না। এমনই বক্তব্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সৌমিক ভট্টাচার্যের। সর্বগ্রাসী নিয়ন্ত্রণ ও দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে তৃণমূল। সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্জলী যাত্রা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। একথা জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর নিজেও এই বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন। তিনি কখনওই বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য পথ থেকে সরতে রাজি নন। এই বিলে তিনি সই করবেন না। একথা কার্যত পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন তিনি।