বিপুল ভোটে জয় লাভ করে দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি পদে বসছেন তিনি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল দশটায় দেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন দ্রৌপদী মুর্মু। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর দেশ পেল প্রথম জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত সাংবিধানিক সর্বাধিনায়ক।
প্রসঙ্গত গত ২১ জুলাই বিরোধী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্ত সিনহাকে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে হারিয়ে দেশের ১৫তম রাষ্টপতি নির্বাচিত হন মুর্মু। প্রথম আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত রাষ্ট্রপতি হওয়ার পাশাপাশি তিনি ভারতের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি।
এছাড়াও তিনি ভারতের প্রথম এমন রাষ্ট্রপতি যার জন্ম হয়েছে স্বাধীন ভারতে। মুর্মু দেশের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতিও বটে। আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে যখন দেশ উদযাপন করছিল স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষ সেই বছরই একজন কাউন্সিলার হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মুর্মু।
আজ রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার পরে প্রথম জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এই সমস্ত অজানা তথ্যই দেশবাসীর সামনে তুলে ধরলেন ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট। এদিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার ঠিক পরেই সকাল ১০ টা বেজে ২৩ মিনিটে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়া শুরু করেন ভারতের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
ভাষণের প্রথমেই তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দেশের সমস্ত নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান তাঁর এই অভাবনীয় রাজনৈতিক যাত্রায় তাঁর পাশে থাকার জন্য। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে প্রথমেই মুর্মু তুলে ধরেন নিজের ব্যক্তিগত কিছু লড়াইয়ের ইতিহাস।
মুর্মুর কথায়, ‘আমি দেশের প্রথম জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত রাষ্ট্রপতি। তাই আমার জাতির কি করে উন্নতিসাধন হয় তার উপর আমার সর্বদা নজর থাকবে। আমি ওড়িশার এমন এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা যেখানে কলেজ যাওয়া তো দুরস্ত প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা গ্রহণও কার্যত অসম্ভব ছিল। সেই গ্রামের আমিই প্রথম বাসিন্দা যে কলেজে গিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আজ দেশ তথা দেশের নাগরিকরা যখন ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপন করছেন তখনই দেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শুরু হল আমার যাত্রা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে যে বছর ভারতের স্বাধীনতা ৫০তম বর্ষে পদার্পণ করেছিল সেই বছরই একজন কাউন্সিলর হিসাবে আমার রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে।’
একই সঙ্গে এদিন মুর্মু বলেন, ‘আমি দেশের সমস্ত নাগরিককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই একজন সামান্য কাউন্সিলর থেকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ বছরের আমার এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমার পাশে থাকার জন্য এবং আমাকে সমর্থন করার জন্য। আমি যেহেতু দেশের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি, তাই আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবেন দেশের মহিলারা। আগামীতে আমার প্রতিটা পদক্ষেপ দেশের মহিলাদের স্বাধীনতা এবং স্বনির্ভরতায় সাহায্য করবে।’
প্রসঙ্গত এদিন রাষ্ট্রপতি মুর্মুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর রাজনাথ সিংয়ের মত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে পাশাপাশি সোনিয়া গান্ধী, নবীন পট্টনায়কের মতো একাধিক বিরোধী নেতাকেও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে।
এদিন রাষ্ট্রপতি মুর্মুকে শপথ বাক্য পাঠ করান ভারতের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামনা। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মুর্মুর পাশে ছিলেন ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু এবং লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের সাংসদ এবং মুখ্যমন্ত্রীরাও এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।