পরিচালক মৃণাল সেনের জন্ম শতবর্ষে ‘পদাতিক  মৃণাল’

চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের জন্ম শতবর্ষে স্পন্দন  পিপলস থিয়েটারের উদ্যোগে  সম্প্রতি আকাদেমিতে মঞ্চস্থ হল  ‘পদাতিক  মৃণাল’। বাম মনোভাবাপন্ন মৃণাল প্রত্যক্ষ করেছিলেন সমসাময়িক রাজনীতির নানা ঘটনার ভালোমন্দ। পঞ্চাশের মন্বন্তর, ষাটের জমির লড়াই, সত্তরের নকশাল আন্দোলন দেখেছেন সামনে থেকে। তাঁর রাজনৈতিক অনুভূতির প্রকাশ কালজয়ী বিভিন্ন চলচ্চিত্রে। সেই মৃণালকে এই জীবনভিত্তিক  নাটকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।‘কলকাতা ৭১’, ‘খারিজ’, ‘কোরাস’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘ইন্টারভিউ’, ‘একদিন প্রতিদিন’ সহ মোট ন’টি  সিনেমার চরিত্ররা এই নাটকে মৃণাল সেনের সঙ্গে মঞ্চে  মুখোমুখি হয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে পরিচালকের ছবি নিয়ে তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্ন। সময়ের পাকেচক্রে দাঁড়িয়ে  কখনও তিনি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কখনও চুপ করে থেকেছেন। প্রশ্ন কিন্তু থামেনি।  

তথ্যমূলক নাটকে মৃণালকে উপস্থাপনা করতে তাঁর ফিল্মকেও ব্যবহার করা হয়েছে মঞ্চে। এটা অনেকটা থিয়েটার কাট টু ফিল্ম থেকে  ফিল্ম কাট টু থিয়েটারের ভাবনায় তৈরি। বাদ যায়নি তাঁর ব্যক্তি জীবনও। মৃণালের নিজের মুখেই শোনা যায় সেই সব কথা। মৃণালের দৈনন্দিন ভাবনা, হতাশা সব কিছুই স্থান পেয়েছে এই নাটকে। প্রযোজক কৃষ্ণমূর্তির (অমিত পাল) অভিনয়ের পরিসর ছোট হলেও অভিনয়ে চারিত্রিক দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। ডিম্পল কাপাডিয়ার চরিত্রে আভেরি নাথ যথাযথ।

নাটকের নায়ক  অর্থাৎ মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রবীর ঘোষ। তিনি এই  চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। আদবকায়দা থেকে ধূমপানের ধরন— দারুণ রপ্ত করেছেন। এই নাটকে মৃণালের কণ্ঠাশ্রিত অধিকাংশ সংলাপ মৃণাল সেনের নিজস্ব সংলাপ থেকে নেওয়া হয়েছে।দু’ঘন্টায় একটা বর্ণময় জীবনকে ধরার চেষ্টা সহজ নয়। খুব সতর্ক হয়ে সে কাজ সামলেছেন পরিচালক সমুদ্র গুহ। আলো ও আবহ ছাড়া নাটক সম্পূর্ণ হয় না। সে দায়িত্ব সামলেছেন শশাঙ্ক মণ্ডল ও অনিমেষ রায়। পূর্ণ  প্রেক্ষাগৃহ এই নাটকের গুরুত্বকে শুধু বোঝায় না, মৃণাল সেনকে নতুন করে চেনার স্পৃহা বাঙালির কাছে কতটা, তা আবার প্রমাণ করে।