দিনহাটাঃ কাকে বাছবেন মমতা?

Mamata Banerjee, Rabi Ghosh, Udayan Guha, Partha Pratim Ray, TMC, by-election

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে দিনহাটা বিধানসভায় নাম মাত্র ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সাংসদ নিশীথ প্রামানিক। তাই আপাতত বিধায়কহীন দিনহাটা বিধানসভা। এই বিধানসভায় উপনির্বাচন (Dinhata by election) আসন্ন। সাংবিধানিক নিয়মানুসারে বিধায়কহীন বিধানসভায় ছয় মাসের মধ্যে উপ নির্বাচন করা প্রয়োজন। আর এই উপ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তরবঙ্গে জল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে দিনহাটা। কেননা রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য  ক্ষমতায় এসে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর নিজের কাছে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, দিনহাটায় যদি তৃণমুল কংগ্রেস জয়ী হয় তাহলে সেই বিধায়ক হতে পারে ভবিষ্যতের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। নির্বাচনের পরে যেভাবে উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তাতে কোনো হেভিওয়েটকে দিনহাটা থেকে নির্বাচনে জিতিয়ে এনে এই মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে তৃণমুলের অন্দরে জোর আলোচনা চলছে। আর তাতেই দিনহাটায় শাসক দলের প্রার্থী হিসেবে একাধিক নাম ভেসে আসছে। দিনহাটার প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ, রাজ্যের প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রসের সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় সহ আরোও অনেক নামের কথা জল্পনা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিনহাটায় উপ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাকে পছন্দ করেন। কোচবিহারের হেভিওয়েট এই নেতার মধ্যে কার ভাগ্যে শিকে ছিড়ে তা আপাতত বলা না গেলেও তুল্যমুল্য আলোচনা হতেই পারে।

Udayan Guha, TMC, by-election

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের দিনহাটা কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন উদয়ন গুহ। মাত্র ৫৯ ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজেপি প্রার্থী তথা সাংসদ নিশীথ প্রামানিকের কাছে পরাজিত হন। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও উত্তরবঙ্গে লোকসভা ভোটের মতই  গেরুয়া ঝড় অব্যাহত ছিল। সেই ঝড় উদয়ন গুহ দিনহাটায় সামাল দিতে না পারলেও কাটায় কাটায় লড়াই দিয়েছেন। ভাগ্যের ফেরে মাত্র কয়েক ভোটে উদয়ন হেরে যান বলে উদয়ন অনুগামীরা দাবি করেছে। লোকসভা ভোটের পরে উদয়ন গুহের উপর আক্রমন হলেও মাটি কামড়ে দিনহাটায় ছিলেন তিনি। গ্রামগঞ্জে সাংগঠনিক জোর আর উদয়ন গুহের পরিশ্রমের জন্যই দিনহাটায় বিজেপির সাথে লড়াই দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে তৃণমূল কর্মীরা দাবি করেন। শহরে আশানুরূপ ভোট না পাওয়াতেই  এবারে হারার খেদ রয়ে গেল উদয়নবাবুর। সাংসদ নিশীথ প্রামানিক দিনহাটার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতেই আর একবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ এসেছে উদয়ন গুহের সামনে। আর তিনি ফের দিনহাটা থেকে জোড়া ফুল চিহ্নে দাড়াবেন কিনা ঠিক করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদয়ন অনুগামীরা তাদের প্রিয় নেতাকে দিনহাটা উপনির্বাচনে (Dinhata by election) প্রার্থী হিসেবেই দেখতে চান। তাদের দাবি, এবারের নির্বাচনে জেতার পরে উদয়নবাবুর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালায় বিজেপি। নির্বাচনে পরাজয়ের পরেও যেভাবে তৃণমূলকে সংগঠিত রাখতে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন উদয়ন গুহ সেজন্যই এই আক্রমণ হয়। উদয়ন গুহের হাত ভেঙ্গে দিলেও দলের কাজ থেকে তাঁকে আটকানো যায় নি। সুস্থ হয়েই দিনহাটায় বিজেপিতে একের পর এক ধস নামাচ্ছেন উদয়ন গুহ। এবারে প্রার্থী হলে দিনহাটার ঘরের ছেলে উদয়নের জয় নিশ্চিত।

Rabi Ghosh, TMC, by-election

তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম লগ্ন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। কোচবিহারে তিলে তিলে তাল করে তুলেছেন দলকে। শুন্য থেকে শুরু করে  ২০১৬ সালে নয়টি বিধানসভায় মধ্যে আটটিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে জয়ী করার কান্ডারী হলেন রবীবাবু। তাঁর ফলস্বরুপ  ২০১৬ সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের দায়িত্ব রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দপ্তরের দায়িত্ব নিয়েই উত্তরবঙ্গকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেন তিনি। মালদা থেকে কোচবিহারে একাধিক প্রকল্প হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের হাত ধরে। তবে গেরুয়া ঝড়ে দলের একদা সহকর্মী মিহির গোস্বামীর হাতে নিজের কেন্দ্রে পরাজিত হন তিনি। দিনহাটার উপনির্বাচনে (Dinhata by election) তৃণমুলের টিকেটের দাবিদার তিনিও।

রবী অনুগামীদের দাবি, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে রবীবাবুর পরিশ্রমের জন্যই দিনহাটায় বামেদের দুর্গ ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব হয়। কমল গুহের গড় বলে খ্যাত দিনহাটায় সমস্ত জেলাপরিষদ সিটে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়। পঞ্চায়েত সমিতি গুলি বামেদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। পরবর্তীতে সিংহ শিবির ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে উদয়ন গুহ জোড়া ফুল প্রতীকে জয়ী হন। ২০১৬ সালে দিনহাটায় সিংহের দাপট রুখতে রবীর তৈরি সেই সংগঠন কাজ দিয়েছে বলে দাবি করা হয়।

তবে ২০১৯ সালে কোচবিহার লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস পরাজিত হতেই দলনেত্রীর কোপে পড়েন রবী ঘোষ। দলের জেলা সভাপতি পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা সভাপতির পদ গেলেও নেত্রীর প্রতি বিশ্বস্ততা দেখিয়ে গেছেন। দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলেও তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত সিতাই ও মেখলিগঞ্জে দলীয় প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছে। দলের অন্দরে আলোচনা চলছে, কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গে আলাদা রাজ্যের দাবিতে যেভাবে আন্দোলন বাড়ছে তাতে রবী ঘোষের মত দাপুটে নেতাই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরে প্রয়োজন। তবেই এই আন্দোলনের রাশ টানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Partha Pratim Ray, TMC, Dinhata by election

কোচবিহারে তরুণ তুর্কী নেতা পার্থ প্রতিম রায়ের নামও দিনহাটা উপ নির্বাচনের (Dinhata by election) প্রার্থী হিসেবে উঠে আসছে। লোকসভা নির্বাচনে দল টিকিট না দিলেও তৃণমূল ছাড়েননি তিনি। তাঁর পুরষ্কার হিসেবে দলনেত্রী তাঁকে জেলার দায়িত্ব দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে শীতলকুচি বিধানসভায় এগিয়ে থাকা আসনে এবারে বিধানসভায় প্রার্থী করা হয় তাঁকে। নির্বাচনে পরাজিত হলেও রাজবংশী মুখ হিসেবে জেলায় জনপ্রিয় তিনি। জেলায় রাজবংশী ভাবাবেগকে কাজে লাগাতেই পার্থ প্রতীম রায়কে বাছতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে অনেকের অনুমান। তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন মমতাই। তাই কাকে বাছবেন মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়েই এখন জোর আলোচনা চলছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে।