স্বাস্থ্যের নামে তোলা তুলছেন উদয়ন গুহ। সোমবার কোচবিহারের সাংবাদিক সম্মেলন করে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন নাটাবাড়ী কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী। শিশুমঙ্গল সমিতি নামে সরকারী ভাবে অনথিভুক্ত একটি সংস্থাকে সামনে রেখে লাখ লাখ টাকা তোলা হচ্ছে। আর এই অবৈধ টাকা তোলার জন্য সরকারী কর্মচারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মিহিরবাবু অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শরণাপন্ন হবেন তিনি বলে জানান মিহিরবাবু। যদিও তোলাবাজীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উদয়ন গুহ। নিয়ম মেনেই সব কিছু করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি মিহিরবাবুকে পাল্টা ‘সুইচ অফ ‘ বিধায়ক বলে কটাক্ষও করেন।
করোনায় জেরবার সমগ্র বিশ্ব। শীঘ্রই তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পরার আশংকা করছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই ঢেউকে রুখতে রাজ্য জুড়ে জোর সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। সেইজন্য দিনহাটাতে প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে শিশুমঙ্গল সমিতি। সেই সমিতিতে প্রাক্তন বিধায়ক ছাড়া রয়েছেন দিনহাটা হাসপাতালে সুপার রঞ্জিত মন্ডল সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা। এই সমিতির উদ্যোগে সম্প্রতি টাকা তোলা হচ্ছে। সেই টাকা দিয়ে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে “স্পেশাল চাইল্ড কেয়ার” তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর বেসরকারী এই প্রচেষ্টাকে ঘিরেই উঠছে নানা প্রশ্ন।
এদিন বিজেপি অভিযোগ তোলে, শিশুমঙ্গল সমিতি কোনো সরকারী নথিভুক্ত সংস্থা নয়। অথচ এই সংস্থার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা হচ্ছে। এইভাবে অনথিভুক্ত সংস্থার মাধ্যমে টাকা তুলে আসলে টাকা আত্মসাৎ করছেন তৃণমূল নেতারা। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কি এতই বেহাল যে শিশুদের মঙ্গলের জন্য বেসরকারী উদ্যোগে সরকারী হাসপাতালে পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে।
অভিযোগ, শুধু টাকা তোলা নয় জোর করে বিভিন্ন সরকারী কর্মীদের কাছে “তোলা” নিচ্ছে এই সমিতি। দিনহাটার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এই সমিতিতে টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছে বিভিন্ন প্রধান শিক্ষক। কত টাকা অনুদান দিতে হবে সেটাও ধার্য করে দেওয়া হচ্ছে। চতুর্থ শ্রেনীর কর্মীদের ন্যুনতম হাজার টাকা, শিক্ষকদের জন্য দুই হাজার করে টাকা অনুদান দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ী, চিকিৎসক সহ সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছে টাকা তোলা হচ্ছে বলে বিজেপি অভিযোগ তুলেছে।
সরকারী কর্মচারীদের সামনে রেখে সাধারন মানুষকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের সুপারকে এই কমিটিতে রাখা হয়েছে। অনুমোদনহীন এক সংস্থায় কিভাবে সরকারী কর্মচারীরা পদাধিকারে আছেন, প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
বিজেপির দাবি, শুধু শিশুমঙ্গল সমিতির নামেই নয় দিনহাটায় স্বাস্থ্যমেলা করেও “তোলা” তোলেন উদয়ন গুহ। প্রতি বছর স্বাস্থ্যমেলার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। স্বাস্থ্যের নামে টাকা তোলা ব্যবসায় পরিনত করেছে উদয়ন গুহ বলে মিহিরবাবু দাবি করেছেন। বাম আমলের বীজ কেলেঙ্কারির কথা তুলে ধরে শিশুমঙ্গল সমিতির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় কে এই আমলে “স্বাস্থ্য কেলেঙ্কারি” বলে অভিহিত করেছেন মিহিরবাবু। এই বিষয়টিও তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাবেন বলে সাংবাদিকদের তিনি জানান।
বিজেপির এই দাবির পাল্টা দিয়েছেন উদয়ন গুহ। তিনি দাবি করেছেন নিয়ম মেনেই শিশুমঙ্গল সমিতি তৈরি করা হয়েছে। এই সমিতির সংগ্রহীত টাকা কোনোভাবেই নয়ছয় হচ্ছে না। ব্যাংকের মাধ্যমে সমস্ত টাকার লেনদেন হচ্ছে। আসলে দিনহাটায় উন্নতি সহ্য হচ্ছে না বলেই মিহির গোস্বামীর গোঁসা। তাকে “সুইচ অফ বিধায়ক” আখ্যা দিয়ে বিঁধেছেন তিনি। স্বাস্থ্যমেলায় আসা মিহির গোস্বামীর পুরোনো ছবি সোস্যাল মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছেন উদয়নবাবু। তিনি লেখেন: “ও গোঁসাই শিষ্য বাড়ি এসে কি ভাগ না নিয়ে গিয়েছেন?”
‘তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, দিনহাটার ভালোর জন্য প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারন মানুষ। তাই অনেকেই স্বেচ্ছায় দান করছেন। কাউকে কখনই জোর করা হয়নি।