তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ফেরার আগে থেকেই জনসাধারণের জন্য বহু প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার৷ বিধানসভা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রতিটি পরিবারের ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করবেন৷ বিপুল জনাদেশে ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ যা সারা দেশের নজর কেড়েছে৷ প্রশংসিত হয়েছে তাঁর প্রকল্প৷ কিন্তু সেই সঙ্গে একটি প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে৷ কোথা থেকে আসবে এই প্রকল্পকে জিইয়ে রাখার টাকা? সরকারি ভাঁড়ারের দৈন্যদশায় কতদিন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’র মতো প্রকল্প চালানো যাবে তা নিয়েই এখন সংশয়৷ এমতাবস্থায় একটাই পথ, ঋণ৷
প্রশাসনিক মহলের মতে, এই সকল সরকারি প্রকল্প চালাতে ঋণ নেওয়াই একমাত্র পথ। ধার নেওয়া টাকাতে প্রকল্পের খরচ চালানোর জল্পনা শুরু হয়েছে নবান্নের অন্দরেও। অর্থ-বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ হিসেব কষে বলছেন, স্বাস্থ্যসাথী ও লক্ষ্মীর ভান্ডার চালাতে যে-খরচ বরাদ্দ হয়েছে, ঋণ নিলে তা চালানো অসম্ভব হবে না৷ ক্ষমতায় আসার পর প্রায় সমস্ত প্রতিশ্রুতিই পালন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বৃহৎ প্রকল্প এখন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী৷ এই দুই প্রকল্পের জন্য বছরে সরকারের খরচ হবে কমবেশি প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য বিষয় হল বাজেট-নথি অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষের তুলনায় চলতি অর্থ বর্ষে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রেখেছে সরকারও।
সরকারের অনুমান ছিল, অন্তত দু’কোটি মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করাবেন। প্রশাসনিক তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য আবেদন জানিয়েছেন ১.৬৩ কোটি উপভোক্তা। প্রায় ১.৫২ কোটি আবেদনপত্র অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি আবেদনপত্রগুলি যাচাই করা হচ্ছে৷ বাতিল হয়েছে প্রায় সাত লক্ষ আবেদন। এখনও পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন ১.৪৩ কোটি উপভোক্তা। এর জন্য সরকারের খরচ হচ্ছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা৷ গোটা অর্থ বর্ষে এরজন্য খরচ হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা৷ তবে জানুয়ারি মাসে ফের দুয়ারে সরকার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার। তখন নতুন করে আবেদন জমা পড়বে৷ তখন উপভোক্তার সংখ্যা দু’কোটি হয়ে যাবে৷ সেই সঙ্গে সরকারের খরচ বেড়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা হয়ে যাবে। অন্যদিকে, আড়াই কোটি পরিবার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন৷ গত বাজেটে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য ১৯৭০ কোটি টাকা ধরা রয়েছে৷