কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না গরুপাচার

এই মুহূর্তে গরুপাচার কাণ্ডে রাজ্যে জুড়ে তোলপাড় পরিস্থিতি। গরু পাচার মামলায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

গরু পাচার কাণ্ড নিয়ে তদন্তকারীদের হাতে রোজই নিত্য নতুন তথ্য উঠে আসছে। যা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায়। তবে কি গরু পাচার কাণ্ড নিয়ে এতটা হইচই পড়ে গেলেও সেটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে? উত্তরটা হচ্ছে না।

বিভিন্ন কায়দায়, মোড়কের পরিবর্তন করে গরু পাচার চলছে রমরমিয়ে। সম্প্রতি গরু বোঝাই একটি কন্টেনার ধরা পড়েছে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে। এর পাশাপাশি পুরুলিয়ায় দুধের গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর গরু। যা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসছিল একটি ডাক পার্সেল বা ভারী জিনিসপত্র বোঝাই কন্টেনার। সেই গাড়িটিকে দেখে সন্দেহ হয় সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটিকে আটকান তাঁরা।

ঘটনাস্থলে চলে আসেন গো-রক্ষা কমিটির সদস্যরা। এরপর গাড়ির দরজা খোলা হলে দেখা যায় ভিতরে রয়েছে প্রচুর গরু। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পুলিশে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, গাড়িটি ধরা পড়তেই চালক ও খালাসি পালিয়ে যায়।

এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এই গাড়িতে করে পাচার করা হচ্ছিল গরু। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ হয়ে গরুগুলি পাঠানো হতো বাংলাদেশে। গাড়িতে ব্যবহার করা হত দুটো আলাদা নম্বর। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে গরু পাচার চলছিল বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

উল্লেখ্য বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রচুর গরু পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাচার হয় বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। প্রত্যেকটি রাজ্যের লিঙ্কম্যান গোটা ‘অপারেশন’টি সামলায়। এভাবেই সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার চলছে।

সীমান্তে একটি চালু কথা আছে, সেটি হল সেখানে নাকি অর্থনীতি চার পায়ে হাঁটে! কারণ গরু পাচারের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ এভাবে অবৈধভাবে টাকা রোজগার করে দিনযাপন করছে। তাই এটা স্পষ্ট অনুব্রত কাণ্ডের মধ্যেও গরু পাচার কিন্তু থেমে নেই।

ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি পুরুলিয়ার ঘটনাও সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। পুরুলিয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থার দুধ কোম্পানির কন্টেনারের ভিতরে ছিল গরু। পুরুলিয়ার হুড়া থানার অন্তর্গত পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কের উপর বিষপুরিয়া মোড়ের কাছে হঠাৎই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গাড়িটি।

এরপর দেখা যায় গাড়িটির ভিতরে প্রায় ২৫টি গরু রয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গরুগুলিকে উদ্ধার করে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে এভাবেই দুধের গাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে গরু পাচার করা হচ্ছিল বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

তাই এটা পরিষ্কার পাচারকারীরা নিত্যনতুন উপায় বের করে গরুগুলি পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাই পুরুলিয়ায় যা ঘটেছে সেটিকে বিচ্ছিন্ন বলে উড়িয়ে দিলে চলবে না। এর শিকড় কত দূর বিস্তৃত তা কারও জানা নেই।

ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে বিক্ষিপ্তভাবে শুধু সিবিআই তদন্ত করলেই গরু পাচার বন্ধ করা যাবে না। প্রত্যেকটি রাজ্যের প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সেখানে বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা প্রশাসনের। না হলে গরু পাচার কোনও দিনই বন্ধ হবে না। পাচারকারীরা ফের নতুন কোনও ফন্দি বের করে ফেলবে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন গরু পাচার নিয়ে কতটা কড়া অবস্থান নেয় সেটাই দেখার।